ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করাসহ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম মুশফিকুর রহমান আশিকের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অনলাইন পরীক্ষার ভাইভায় ছাত্রীদের অশালীন প্রশ্ন করা, নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া ছাত্রীদের রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নিজের কার্যালয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভনে ছাত্রীদের অনৈতিক ইঙ্গিত দেওয়া, পরীক্ষা চলাকালীন পছন্দের শিক্ষার্থীকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, পরীক্ষার হলে ও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সরাসরি হুমকি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, যারা এস এম মুশফিকুর রহমান আশিকের কথা মেনে চলে এবং যারা মানে না তাদের ফলাফলে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীর মাধ্যমে একই ব্যাচের অন্য সহপাঠীদের ফলাফল রেজাল্ট শিটে লিপিবদ্ধ করেন।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান এবং অন্য শিক্ষকদের নিয়ে কটূক্তি, পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ইস্যু টেনে এনে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয়েছে।
গত রোববার (১৪ আগস্ট ২০২২) শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেয় বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের ১৮ জন শিক্ষার্থী।
বোরকা পরে প্রেজেন্টেশন বা ভাইভা দেওয়ার কারণে অনেক ছাত্রী তার কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, এক সেমিস্টারে একাধিক কোর্স পাওয়ায় এস এম মুশফিকুর রহমান আশিক নিজের ইচ্ছেমতো নম্বর বণ্টন করেন। তিনি পরীক্ষা চলাকালীন উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন এবং শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন।
অপরদিকে পরীক্ষার আগের রাতে পছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কর্তৃক পরিচালিত ‘শিক্ষক মূল্যায়ন প্রোগ্রামে’ প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগে বিভাগের প্রথম ব্যাচের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগের কম-বেশি সব মেয়েই স্যারের হেনস্তার শিকার। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রী শিক্ষক দ্বারা হেনস্তার শিকার হবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মার্ক টেম্পারিং ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনৈতিক ইঙ্গিত দেওয়ার বিষয়টি অনেক আগের। তবে এটি এখন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডিনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এস এম মুশফিকুর রহমান আশিককে যেন বিভাগের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
অভিযোগ পত্র হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করে শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র এসেছে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। আমরা উপাচার্যের সঙ্গে বসে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে অভিযোগের বিষয়গুলো ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক এস এম মুশফিকুর রহমান আশিক।
এ বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান বিপ্লব মল্লিক বলেছেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হবে। তাই কমিটি গঠন ও তদন্তের পূর্বে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চান না তিনি।