শেয়ার বাজার নিয়ে গুজব নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরই মধ্যে বিএসইসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুজব সৃষ্টিকারী ৩১টি ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
এছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠন করেছে বিএসইসি। বিএসইসির মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের (এমএসআইডি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ মনিটরিং সেলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এরইমধ্যে এই সেলের নাজরদারী অনুযায়ী, নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ফেসবুকে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করার অপরাধে মো. মাহবুবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মো. মাহবুবুর রহমানের ওই ব্যক্তি গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ‘শেয়ার বাজার ২০২১’ নামের ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন, যে যা পারেন সেল দিয়ে বের হয়ে যান। ইনডেক্স ৫,৬০০ পর্যন্ত পড়বে ……. প্যানিক নয় বাস্তবতা!
বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএসইসির সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মাহবুবুর রহমান ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় শেয়ার বাজার সম্পর্কিত গুজব সৃষ্টিকারী পোস্ট করে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে বাজার কারসাজি করাই এসব গুজবের উদ্দেশ্য।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় বিএসইসির উপ-পরিচালক মুন্সী মো. এনামুল হক একটি মামলা দায়ের করেন।মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মো. মাহবুবুর রহমান বর্তমানে ক্যাজুয়াল কর্মচারী হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কাজ করছেন। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে শেয়ারবাজার সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিনিয়োগকারীদের প্ররোচনা ও প্রলুদ্ধ করে বেআইনীভাবে লাভবান হয়েছেন।
‘এরূপ কার্যকলাপের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করাসহ বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করছেন, যা পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারী ও সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম। এধরনের চক্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিনব উপায়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করত।’
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব চক্র পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে ও নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতর্কসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এরপরও ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা থেমে নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। জানাগেছে, এখন গুজব সৃষ্টির সঙ্গে চলছে আইটেম বিক্রি। ফেসবুকে থাকা এমনই একটি পেজ ‘শেয়ার বাজার ২০২১’ । এই পেজে মাহবুব মুমিন (Mahbub Mumin) নামের আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ’৪০ শতাংশ লসে আছেন? লস রিকোভারি করার জন্য বর্তমানে দুটি আইটেম আছে। দুটি আইটেমের দাম বাড়ছে। দ্রুত যোগাযোগ করতে পারেন। এরপর ওই পোস্টে একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দেওয়া হয়েছে।
একই ফেসবুক পেজ থেকে আরিয়ান চৌধুরী (Ariyan Chowdhury) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, আগামীকালের জন্য সেরা দুটি আইটেম রয়েছে। নিতে চাইলে ইনবক্সে ম্যাসেজ করুন।
’বেস্ট আওআই সার্ভিস (Best ROI Service) : লাভজনক বিনিয়োগের পরামর্শ সেবা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, কেডিএস, মালেক, ইউনিয়ন ক্যাপিটালে মেম্বাররা বড় প্রফিট করেছেন। নেক্সট বড় প্রফিট আইটেম পেতে পেজে ইনবক্স করুন।
এভাবে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও আইডি থেকে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করে পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিএসইসি একটি আদেশ জারি করে।
ওই আদেশে পুঁজিবাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট অথবা পুঁজিবাজার বা সিকিউরিটিজ লেনদেনের সঙ্গে যেকোনো উপায়ে সম্পর্কিত সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সিকিউরিটিজ মার্কেট ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোন মাধ্যমে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই’র নাম বা লোগো ব্যবহার করে কোনো তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো লিস্টেড সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য বা অন্য কোনো বিষয়ে পূর্বানুমান কিংবা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এমন কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এসব আদেশ অমান্য করলে সিকিউরিটিজ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি করা হয়।