দেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেনো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ করা না হয় সে জন্য সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চা এগিয়ে নিতে সরকার সতর্ক রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে সাইবার জগতে প্রতিদিন গড়ে ২২৪৪টি অপরাধ সংঘটিত হয় জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, নাগরিকের সাইবার নিরাপত্তার পাশাপাশি ডিজিটাল আর্থিক খাতের নিরাপত্তা শিগগিরি ‘ফিনসার্ট’ গঠন করা হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ এর প্রভাব ও বাস্তবতা নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু গার্ডেনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব কথা বলেন দুই মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই দেশে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতি থেকে দেশের সকল নাগরিককে সুরক্ষিত রাখতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সমান্তরালে তৈরি হয়েছে আইনটি। আমাদের আইনের চেয়ে কঠোর আইনও বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তবে এর অপপ্রোয়েগের বিষয়ে সরকার সতর্ক।
‘ভারতে দি ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০, পাকিস্তানে দ্য প্রিভেনশন অব ক্রাইম অ্যাক্ট ২০১৬ এবং সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ায়ও এ ধরনের আইন আছে। একটি ফ্রেমওয়ার্ক আইনের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলো এ ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই আইন করা হচ্ছে’, জানান ড. হাছান।
তিনি আরো বলেন, ইউরোপিয় দেশগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়, গুজব ছড়ায় বা কারো চরিত্র হনন করা হয় তাহলে ওই প্লাটফর্মকে জরিমানা করা হয়। আমাদেরও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। গৃহীনি, কৃষক, ছাত্র, লেখক, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী সকলের নিরাপত্তা দিতেই সময়ের প্রয়োজনে এই আইন করা হয়েছে।
অপরদিকে সভাপতির বক্তব্যে সাইবার নিরাপত্তার পাশাপাশি ডিজিটাল আর্থিক খাতের নিরাপত্তা শিগগিরি ‘ফিনসার্ট’ গঠন করার কথা জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সুরাক্ষা ব্যয়বহুল বিষয় নয়, এটি অমূল্য মন্তব্য করে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে সমাজে অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা বন্ধে আইনের বিকল্প নেই’।
তার ভাষায়, নাগরিক তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হচ্ছে। ব্যক্তির বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এই আইনের অধীনে নাগরিকের সুরক্ষা ও আত্মমর্যাদা সমুন্বত করা হচ্ছে।
পলক আরো বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবাধ সংযুক্তির সুবিধা নিয়ে প্রায়শই দেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। এতো দুর্ভোগের শিকার হন কোটি মানুষ। তাই বাস্তব জীবনের মতো ডিজিটাল জীবনের নিরাপত্তার জন্যই ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। বস্তুত সাইবার সুরক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, গৌণ বিষয় নয়।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারলে আবু মুহাম্মাদ আমিন উদ্দিন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মত প্রকাশ স্বাধীনতার ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সামাজিক অপরাধ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আলি আসিফ খান রাজীব ও ব্যক্তি পর্যায়ের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে প্রযুক্তি ও আইনি বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এস এম সাইফুল্লাহ রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মান্থলি ডিপ্লোম্যাট ও সেল্ট্রনের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।