ইন্টারনেটে ‘একদেশ এক রেট’ এবং ‘আনলিমিটেড’ প্যাকেজ দিয়ে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। তবে এই সুযোগ উপভোগ করতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের। এক্ষেত্রে মোবাইল ডাটায় ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ হিসেবে ‘এক বছর মেয়াদ’ এবং মাসিক প্যাকেজে ‘দৈনিক ব্যবহারসীমা’ নিয়ে সেবাদানকারী বেসরকারি ৩ অপারেটরের প্যাকেজে তুষ্ট হতে পারেননি গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ এ তো ‘নতুন মোড়কে পুরোনো মদ’।
তবে নেটিজেনদের অসন্তোষ ও অভিযোগ দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরফলে সহসাই অপারেটর-গ্রাহকদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপনে ইন্টারনেট সেবায় বিশ্বে রোল মডেল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এর আলামত যদিও এরই মধ্যে মিলতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কেননা, অপারেটরদের ৯৫টি প্যাকেজের মধ্যে যেই ২টি আনলিমিটেড প্যাকেজ গত ২৮ এপ্রিল চালু হয়েছে। ক্রমেই সেই প্যাকেজগুলোর কাটতি বেড়েই চলেছে।
সূত্রমতে, ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য এখন গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টেলিটকের ১২৭ টাকায় ৬ জিবির অফার। তবে নেটওয়ার্ক-এ এগিয়ে থাকায় ডেটা দাম তুলনামূলক বেশি হলেও আনলিমিটেড প্যাকেজে ‘৩৬৫ দিন মেয়াদের’ ৪৪৯ টাকায় ৫জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবাহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে গ্রামীণফোনের। পাশাপাশি বাংলালিংকের ৩০৬ টাকায় ৫জিবি ইন্টারনেট গ্রাহকদের দৃষ্টি কেড়েছে। অবশ্য গড় জনপ্রিয়তায় এই তালিকায় সবার উপরে আছে রবি’র ৩১৯ টাকার ১০জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ।
তবে আনলিমিটেড বলা হলেও এসব প্যাকেজের সাথে থাকা ৩৬৫ দিনের সীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়টি সহসাই থাকছে না বলে আভাস দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মেস্তাফা জব্বার।
ডিজিবাংলা-কে তিনি জানান, আমি দেখেছি, জিপি’র প্যাকেজটি অসন্তোষের বিষয়। বিষয়টি বিটিআরসি তাদের জানিয়েছে। আশা করছি, এটা সহসাই ঠিক হয়ে যাবে। আর বাকিদের আনলিমিটেডের প্যাকেজে এক বছরের যে মেয়াদ দেয়া হয়েছে তা উঠিয়ে নিতে সকলকেই জানানো হয়েছে।
আনলিমিটেডে মেয়াদ বেঁধে দেয়াকে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ওরা (অপারেটররা) মনে করেছিলো যে যদি কেউ এক বছরের বেশি ফোন ব্যবহার না করে এর মধ্যে তো সিমই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বিষয়টি তাদের সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
আর মাসিক প্যাকেজে ডাটার দাম সহনশীল করতে অপারেটরদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, চেষ্টা করা হবে দামটা যেনো মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে তা বাস্তবায়নে বিটিআরসি নিয়মিত নজরদারি করবে। দৈনিক এক জিবি বা দুই জিবি ডাটা ব্যবহার করার মতো যেসব শর্ত দেয়া আছে তাও অপারেটররা উঠিয়ে নেবে।
যারা গ্রাহক বান্ধব হবে আগামীতে তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে আভাস দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটে আনলিমিটেড ডাটা বিশ্বে বাংলাদেশেই প্রথম। আর ডাটা ব্যবসায় যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে তা দূর করতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশাবাদী এই অবস্থা থাকবে না। কেননা আমরা ঈদের ছুটির পর থেকেই এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। যে কোনো সময় এর ঘোষণা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে দ্রুত অপারেটরদের সঙ্গে শিগগিরি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ। তিনি বলেন, আমরা মাননীয় মন্ত্রীর বিষয়গুলো নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বসে কী করে ডাটার আনলিমিটেড বিষয়টি আরো জনবান্ধব করা যায় সে বিষয়ে বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, শুধু টেলিটকের মেয়াদই সত্যিকার অর্থে আনলিমিটেড বা মেয়াদহীন। অপারেটরটি ৩০৯ টাকায় ২৬ জিবি এবং ১২৭ টাকায় ৬ জিবি ইন্টারনেট দেয়।
সূত্রমতে, এই উদ্যোগকে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে লন্ডন ভিত্তির ব্যবসায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যানালাইসিস ফর ইনোভেটরস (এ৪আই)। বাংলাদেশে সফররত এ৪এআই এ৪এআই গ্লোবাল পলিসি বিষয়ক কর্মকর্তা এলিনোর এবং এশিয় প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বয়কারী আনজু মাংগল বলেছেন, ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে অন্য দেশগুলোর কাছে উদাহারণ হিসেবে তুলে ধরার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে। আনলিমিটেড ডেটা প্যাক ও এক দেশ এক রেট এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার জন্য রোল মডেল হতে পারে।