গুগল, অ্যামাজন, ফেসবুকসহ পৃথিবীর বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির স্বপ্ন কে না দেখেন। এই স্বপ্নটা কিন্তু ইতিমধ্যেই ছুঁয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন তরুণ। আরো অনেক তরুণেরই চাকরি করার যোগ্যতাও রয়েছে। তবে সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে সেই ধাপটা অতিক্রম করতে পারছেন আমাদের নতুন প্রজন্ম। তাদের উদ্দেশেই নিজের গিটহাব ব্লগে (https://github.com/sabir4063/my_preparation) গুগল-এ চকরির প্রস্তুতির কৌশল তুলে ধরেছেন গুগলে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক এবং একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাবির ইসমাইল।
তার পরামর্শ-
১. গুগল-এ চাকরি প্রাপ্তির প্রথম কাজ হচ্ছে প্রোগ্রামিং করা, ডাটা স্ট্রাকচার ও অ্যালগরিদম কোর্স ভালো করে রপ্ত করা। এক্ষেত্রে অন্তত ভালো মানের ৭০০ প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানে মনোনিবেশ করা যেতে পারে। ডাটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদমে ভালো থাকলে কোনো বই না পড়েই Leetcode-এ সরাসরি অনুশীলন করা যেতে পারে। তবে ডাটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদমে দুর্বলতা থাকলে বই পড়ে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ঠিকঠাক আত্মস্থ করতে হবে।
২. বিভিন্ন প্রোগ্রামিং সাইটে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। বিভিন্ন প্রজেক্ট করলে সেগুলো গাটহাবে জমা রাখা। এছাড়াও লিঙ্কডিনে নিজের প্রোফাইল আপডেট রাখা এবং তাতে প্রোগ্রামিংয়ের অর্জন, বিভিন্ন প্রোজেক্টের বর্ণনা দিয়ে কোডের লিংক গিটহাবে দেওয়া।
৩. এক পাতার মধ্যে ভালো মানের একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা। জীবনবৃত্তান্তে প্রোগ্রামিং দক্ষতা রেটিং আকারে না দিয়ে এক্সপার্ট, ফেমিলিয়ার, অ্যাডভান্সড এভাবে উল্লেখ করা ভালো। অতিরিক্ত শব্দ খরচ না করে জীবনবৃত্তান্তে বিভিন্ন প্রজেক্টের সঙ্গে গিটহাব লিঙ্ক জুড়ে দিতে পারেন। তবে জন্ম তারিখ, ছবি, রেফারেন্স এসব না দেওয়া ভালো।
৪. গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনের মতো কোম্পানিতে চাকরির জন্য লিঙ্কডিনে সরাসরি সাক্ষাকার দিতে আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে লিঙ্কডিনের প্রিমিয়ার অ্যাকাউন্ট একটি ভালো উপায়। সংশ্নিষ্ট কোম্পানির নিয়োগকারী তথা হায়ারিং ম্যানেজার/নিয়োগদাতাকে সরাসরি মেইল করা যায়। এক্ষেত্রে রেফারেল থাকলে ভালো। সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন কেমন হতে পারে, কি কি বিষয়ে প্রস্তুতি প্রয়োজন সবই তারা আগেই আপনাকে বলে দেবে। কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে নির্দি্বধায় জেনে নিতে পারেন।
৫. গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানে দুই থেকে তিনটা ফোন স্ক্রিন সাক্ষাৎকার হয়। এটি ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। প্রথমে প্রাথমিক পরিচয় পর্ব। এরপর প্রদত্ত সমস্যাগুলো আপনি কীভাবে সমাধান করবেন সেটি জানাতে হয়। বাকি সময়ে দুইটা মতো সমস্যা সমাধান করতে হয়। ফোন স্ক্রিনে উতরে গেলে অনসাইট সাক্ষাৎকার পর্ব। অনসাইটে চার থেকে পাঁচটা রাউন্ড থাকে। প্রত্যেকটাই ৪৫ মিনিট থেকে টানা এক ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ পর্বে ফোন স্ক্রিনের মতো প্রশ্ন থাকে। কোড করতে হয় হোয়াইটবোর্ডে যদিও ইদানিং গুগলে ক্রোমবুক দেওয়া হয়।
৬. ফোন স্ক্রিন এবং অনসাইট সাক্ষাৎকারে ডাটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম ভিত্তিক সমস্যা থাকে। পাশাপাশি সিস্টেম ডিজাইন ও কালচারাল ফিট বা বিহ্যাভিয়ারাল বিষয়েও প্রশ্ন থাকে। প্রশ্নগুলো সাধারণত ছোট ছোট হয় ১০/১৫ লাইনেই কোডিং সম্পন্ন করা যায়। সমস্যা জানার পরে তার সমাধান সম্পর্কে চমৎকার ধারণা দিতে হবে। প্রশ্ন করে সমস্যা সম্পর্কে পরিস্কার হতে হবে। এরপর পরীক্ষক চাইলে কোডিং শুরু করতে হবে। সাক্ষাৎকার পর্বটি বেশ জটিল মনে হতে পারে। এজন্য পরীক্ষামূলক সাক্ষাৎকার বেশি বেশি প্রাকটিস করতে হবে। সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ হলে ফোন স্ক্রিনের ক্ষেত্রে একদিন পরেই সাধারণত ফলাফল জানানো হয়। আর অনসাইটের ফল পাওয়া যায় সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে।
৭. পরীক্ষায় ভালো করতে নিয়মিত https://www.quora.com/ আর https://medium.com এ পড়া লেখা করা ভালো। https://medium.com/ এর premium account ও কয়েক মাস ব্যবহার করতে পারেন। তবে চাকরির জন্য ৯৫% পরিশ্রম আর বাকি ৫% কপাল, কিন্তু ইন্টারভিউর সময় ৫% কপালের Weight ৯৫% আর ৯৫% পরিশ্রমের Weight ৫%। কারন ইন্টারভিউর দিন অনেক কিছুই হতে পারে। খুব কঠিন প্রশ্ন কিন্তু কমন পরতে পারে, আবার খুব সহয প্রশ্নে Brain Freeze হয়ে যেতে পারে, অন্য প্রার্থীদের তুলনামূলক ভালো/খারাপ হতে পারে। যেহেতু এই ৫% কপালের Weight ৯৫% এ আল্লাহ ছাড়া কারো হাত নেই, তাই বাকী ৯৫% পরিশ্রমের Weight ৫% কে যত Maximize করা যায়। আর এজন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই।