দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ কোটি ও ১৩ কোটির বেশি। এর মধ্যে সামর্থবানদের একাধিক ফোন থাকলেও প্রান্তিক মানুষ বিশেষ করে চা বাগানের শ্রমিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ৮৫ জনেরই রয়েছে নিজের একটি ফোন। এদের মধ্যে প্রায় ৫২ জনই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতভাগ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ব্যবহার করেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে শতকরা প্রায় ২৫ জনই আয় বাড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করে শতকরা ৬ জনই সরকারি সেবা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৬ শতাংশ সরকারি প্রশিক্ষণ, ৪১ শতাংশ অনুদান গ্রহণ, ২৯ শতাংশ স্বাস্থ্য তথ্য এবং ২৬ শতাংশ কৃষি কাজের তথ্য পেতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
এর বাইরে ৫৩ শতাংশ বিনোদনের কাজে এবং ৩৬ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও দেখা এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এছাড়াও সংবাদ জানতে ২৯ শতাংশ, দক্ষতা উন্নয়নে ১২ শতাংশ, চাকরি খুঁজতে ৩ শতাংশ এবং ১২ শতাংশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ও ৪ শতাংশ ই-মেইল ভিত্তিক যোগাযোগ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
টেলিনর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নরওয়ের অংশীদারিত্বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পরিচালিত বেইজলাইন সার্ভের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ১৩টি ফোকাস গ্রুপে ১১টি ইন্টারভিউ ও ৪,৮০০ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা আবাসিক সংলগ্ন জিপি হাউজে ইনক্লুসিভ ডিজিটাল ফিউচার’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে গ্রামীণফোন।
প্রতিবেদন প্রকাশের আগে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে অনলাইন নিরাপত্তা ও ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকর কৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। জরিপে জানানো হয়, এটা শুধুমাত্র ডিজিটাল রূপান্তরই নয়; পাশাপাশি, কিশোরী ও তরুণীদের অগ্রাধিকার দিয়ে একটি যাত্রার সূচনা; কেননা, তারাই দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রতিবেদনে আটটি প্রত্যন্ত ও সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটির জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণ, বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ চতুর্থ শিল্প বিল্পবের জন্য নাগরিকদের প্রস্তুত করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশ নিতে, আমাদের ডিজিটাল স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হবে, যেনো স্মার্ট নাগরিকদের হাতে তাদের নিজস্ব সমাধান থাকে।”
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয়তা হিসেবে ডিজিটাল সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং গবেষণা, প্রশিক্ষণ, উদ্যোগ গ্রহণ ও জ্ঞান প্রচারের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত রূপরেখা তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক এবং সিএএমপিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী লিঙ্গ সমতা এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বেইজলাইন জরিপের ফলাফলের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং দক্ষতার তাৎপর্যের ওপর আলোকপাত করেন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতায় কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং সবার জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীদের ক্ষমতায়নে গ্রামীণফোনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।