মোবাইল ও ল্যাপটপে ব্যবহৃত ব্যাটারি, হার্ডড্রাইভ, হেডফোন, হাইব্রিড ইঞ্জিন তৈরিতে ব্যবহৃত অতিমূল্যবান খনিজ উপাদান মোনাজাইটের সম্ভার মিলিছে দেশেই। যমুনার বালিতে এর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর। সেখানকার বালিতে ৬ থেকে ১০ শতাংশ ভারী মনিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন এ কাজে নিয়োজিত গবেষকরা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মূলবাণ আকরিক থেকে দেশের রাজস্বআয় হবে কয়েকস বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৫ সালে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১০টি দল এই গবেষণা চালায় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের একজন পরিচালক ডিজিবাংলা-কে বলেন, অস্ট্রেলিয়া তাদের সমুদ্র তীরে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ হারে প্রাপ্ত এই ভারী মনিক আহরণ করছে। এ অল্প পরিমাণ উপস্থিতিতেই সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশটি। সেখানে বাংলাদেশে যমুনার বালিতে ১০ শতাংশ উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তাই আমরা এর বাণিজ্যিক সফলতা নিয়েও আশাবাদী।
তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র- যমুনা বেসিনের উজান থেকে ভাটিতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এবং গাইবান্ধা পর্যন্ত ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। ২০১৫ সালে ১৫ ডিসেম্বর শুরু হওয়া প্রকল্পটির নাম ছিলো, “নদী বক্ষের বালিতে ভারি খনিজ শনাক্ত ও আর্থিক মূল্যায়ন”। এর আগে একটি ছোট সার্ভে হয়েছিলো। সেই সার্ভেতে এসব মূল্যবান খনিজ বালির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এবারের সমীক্ষার প্রধান লক্ষ্য ছিলো, এর পরিমাণ কতো এবং বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য কি না। আমরা ব্রহ্মপুত্র–যমুনা এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের বালির নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করেছি। এসব ভারী মণির বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য বলে আমাদের জরিপ দল নিশ্চিত হয়েছে। জানাগেছে, গত সোমবার (৫ আগস্ট) জ্বালানি বিভাগের সচিবের উপস্থিতিতে এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১০ ফুট, ১৫ ফুট ৩০ ফুট গভীর থেকে সংগ্রহিত নমুনার ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে টাইটানিয়াম, ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, লিউকক্সিন, কেনাইট, গারনেট ও মোনাজাইট শনাক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়।
জানানো হয়, পরীক্ষায় জিরকন ৬ থেকে ১০ শতাংশ, ইলমেনাইট ৮ থেকে ১১ শতাংশ শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করছি এই পরিমাণ খনিজ বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য। এরমধ্যে ব্যাটারি তৈরির উপাদানটি সবচেয়ে দামি। এই খনিজ উপাদান এখন পুরোটাই আমদানি করে বাংলাদেশ। আমদানির পরিবর্তে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন এই ভূতত্ত্ববিদ।
সূত্রমতে, এই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রেজেন্টেশন দেখে দুপুর আড়াইটায় সচিবালয় ফিরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে বিষয়টি অবহিত করে জ্বালানি বিভাগের সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিম। প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পরামর্শক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।