জীবজগতে উদ্ভিদই বোধহয় সবচেয়ে বেশি স্মার্ট। কারণ, এরা শুধু নিজের খাবারই নয়, অন্যের খাবারও তৈরি করে। জীবজগতের জন্য যোগান দেয় শর্করা-জাতীয় খাদ্য তথা চলাচলের শক্তি। অথচ এরা নিজেরাই চলাচল করতে পারে না। তারপরও বাঁচিয়ে রেখেছে প্রায় সব প্রাণীর প্রাণ। আবার ক্ষতিকর কার্বন শোষণ করে এই উদ্ভিদ ‘অক্সিজেনের কারখানা’ হয়ে টিকিয়ে রেখেছে মানব সভ্যতা। এদের অন্য সব দক্ষতা ও গুণের কথা সত্যি অভাবনীয়। এই যেমন- উদ্ভিজ্জ রঙ বা ডাই; যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে উন্নত বিশ্বে। জার্মান বিজ্ঞানী মাইকেল গ্রেটজেলে প্রাকৃতিক উপায়ে গাছের নির্যাস নিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির ধারণা দিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে।
এই ২০২৩ সালে এসে সেই ধারণা এখন অনেক পরিণত। তাই আজ যে উদ্ভিদের কথা বলা হচ্ছে, তা সূর্যের আলোয় সালোকসংশ্লেষণে অর্থকরী ফসল উৎপাদন করবে না; দক্ষতার সাথে বিদ্যুত উৎপাদন করবে। অনেকটা উদ্ভিদকে অনুকরণ করে এই ‘স্মার্ট তরু’ বানাচ্ছে যুক্তরাজ্যের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘সোলার-বোটানিক ট্রি’।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম এমন গাছ উৎপাদনে তৎপর হয়েছে। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ২০০টি ‘স্মার্ট তরু’ মজুত রাখা হয়েছে বিশেষ ক্রেতার জন্য। প্রতিষ্ঠানটির পণ্য ব্যবস্থাপক জেরার্ড জ্যানসেন জানিয়েছেন, তাদের উদ্ভাবিত স্মার্ট তরুটির মোট ব্যাস ৫ মিটার। এর ত্রিমাত্রিক আকৃতির পাতায় আছে একরঙা কোষ। এর দাম হবে ১৪ হাজার ৮০ ডলারের মতো। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকেই যুক্তরাজ্যের বাজারে ছাড়া হবে এই স্মার্ট উদ্ভিদটি। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মূল গ্রিডে বিক্রি করারও ব্যবস্থা থাকছে। বৈদ্যুতিক গাড়িতে স্বল্প সময়ে পর্যাপ্ত জ্বালানি জমা করবে এ স্মার্ট তরু।
প্রাকৃতিক উদ্ভিদের মতো সবুজ না হলেও, পরিবেশবান্ধব, নবায়নযোগ্য ‘সবুজ জ্বালানি’ বা গ্রিন অথবা ক্লিন এনার্জি উৎপাদনে সক্ষম এমন উদ্ভিদ সাধারণের জন্য বাজারে আসছে আগামী বছর। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের দিকে অনেক বাড়িঘর, শিল্পকারখানার আঙিনায়, নগর আর বন্দরের সর্বত্র দেখা যাবে এই স্মার্ট উদ্ভিদটি।
যেখান থেকে মিলবে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় বিদ্যুত। একেকটি গাছ দিনে উৎপাদন করবে ৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ একটি মাত্র গাছ বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলবে তিন কক্ষের বাড়ির জন্য।
আগামীতে এ ধরনের ‘সোলার ট্রি’ কেবল বিদ্যুতই সরবরাহ করবে না প্রাকৃতিক গাছের মতো কার্বণ নিঃসরণেও ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান Korea Maritime Institute। দেশটির মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার হানওয়াহ কিউ সেলস গত বছরই এ নিয়ে কাজ শুরু করে পাহাড়ি এলাকায়। এর আগে একই ধরনের প্রকল্প নিয়ে কাজ করে নেদারল্যান্ডও।