সাম্প্রতিক সময়ে চীনা শর্ট ভিডিও মেকিং প্লাটফর্ম টিকটক এর অপব্যবহার দিন দিন বাড়ছেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও নেটিজেনদের জন্য নতুন এক ডিজিটাল মৃত্যু ফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে এই প্লাটফর্মটি।বছরের অর্ধেকটা সময় পর হতেই চলতি বছরে টিকটক করতে গিয়ে প্রাণ গেছে দশজন তরুণ-তরুণীর।
সর্বশেষ গত ১১ জুলাই কুমিল্লায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক করতে গিয়ে পা পিছলে নিহত হয়েছে মেহেদী হাসান নামের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। একইমাসে, ৮ জুলাই নোয়াখালীর চাটখিলে টিকটক ভিডিও বানানোর সময় অসাবধানতাবশত পা পিছলে প্রাণ গেছে সানজিদা আক্তার নামে ১১ বছর বয়সী এক কিশোরীর।
এছাড়া টিকটক কে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে টিক টক ভিডিও আপলোড কে কেন্দ্র করে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত খুন হয়। গত ২ মার্চ ২০২২ রাজবাড়ী জেলার কালোখালি উপজেলায় টিকটক করতে গিয়ে হোসেন (১৬) রেল ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে টিক টক বানাতে গিয়ে রেলের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়। ৮ মে ২০২২ নড়াইলের কালিয়ায় টিকটক করতে বাধা দেওয়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে সুমি আক্তার (১৯)। ১৬ মে ২০২২ চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার শহরের লাল ব্রিজের ও দূরে হৃদয় (১৫) নামে এক কিশোর খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে টিকটক বানাতে গিয়ে কাটা পড়ে। ২২ মে ২০২২ নীলফামারীর সৈয়দপুরে টিকটক করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় মুস্তাকিম ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরের।
টিকটক কেন্দ্রীক কিশোর-তরুণদের এই মৃত্যুর মিছিলের পরিসংখ্যান দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার প্রকাশ করা এই পরিসংখ্যান থেকে আরো জানা যায়, গত বছর ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নির্মানাধীন তিন তলা ভবনের ৭ তলা থেকে পড়ে ১৪ বছর বয়সী অনিল নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। সংগঠনটি মনে করে, তরুণ তরুণীদের এই অকাল মৃত্যুর দায়ভার কোনভাবেই টিকটক কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না। এর দায়ভার তাদেরকে নিতে হবে।
এ বিষয়ে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এতো তরুণ তরুণীর মৃত্যুর কারণ টিকটক হলেও এখন পর্যন্ত টিকটক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন অভিভাবক বাংলাদেশের মামলা করেনি। টিকটক বাংলাদেশের লাইসেন্সধারী কোন প্রতিষ্ঠান নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে অথচ সরকার এই প্লাটফর্ম থেকে কোন প্রকার রাজস্ব পায় না। বরং বিভিন্ন সময় দেখা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি বা বিভিন্ন শীর্ষ স্থানীয় স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের ছবি কেউ টিকটক ভিডিও বানাতে ব্যাঙ্গাত্মক রূপে প্রকাশ করা হয়। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, মাননীয় ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী টিকটক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু আমাদের দাবি, ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী মহোদয়কে চেয়ারম্যান করে বা কমিশনের কোন সদস্যকে বা সচিব মহোদয়কে সদস্য করে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে টিকটক এর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ সহ প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে করে এই প্লাটফর্ম বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের টিকটক বানানোর প্রলোভনে ভারতে তরুণী পাচার করা হয়েছিল। গত বছরের জুন মাসে টিকটকের ফাঁদে ফেলে এক তরুণীকেও ধর্ষণ করা হয় ।তাছাড়া পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে তার অন্যতম কারণ টিকটক বলেও অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।