শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এর পর থেকেই ফেসবুক, টু্ইটার ও লিংকড ইনসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি ও কর্মময় জীবনকে স্মরণ করে মরহুমের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জনাচ্ছেন সব বয়সী নেটিজেনরা। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন চলছেই। দেশ ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই শ্রদ্ধা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়।
ফেসবুকে অনেকেই কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের পোস্টে লিখেছেন, “যে মানুষটি নীরবে মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন। প্রচার চাননি কখনো। শ্রদ্ধা।”
লিংকড ইনে মিলিন্ড গেটস লিছেন, “We were saddened to hear of his passing and will forever draw inspiration from his work, as will the rest of the world, which he left so much better than he found”.
প্রযুক্তি ব্যবসায় অঙ্গনের পরিচিত মুখ সোনিয়া বশির কবীর ফেসবুকে লিখেছেন, স্যার আবেদকে হারিয়ে মাতম করছে বিশ্ব। তিনি একজন লিজেন্ড। অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।”
টুইটারে আফ্রিকার সবচেয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাকারি ইউনিভার্সিটির ভিসি বার্নাবাস নাওয়ানগুই লিখেছেন, I have received a shocking email from BRAC indicating that Sir Fazle Hasan Abed, the founder of @BRACworld has passed away. Sir Fazle has been an icon of international development whom we have closely worked with, through the Mastercard Foundation. May his soul Rest In Peace.
তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে স্মৃতি হাতগে কৌতুক শিল্পী নাভিদ মাহমুদ লিখেছেন, “আমার ৬ বছরের মেয়ে একসময় স্যার আবেদের কাছে জানতে চেয়েছিলো- তুমি নাইট হলে কীভাবে? তুমি কি ঘোড়া আর তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করেছো? উত্তরে স্যার বলেছিলেন- হ্যা যুদ্ধ করেছি। তবে এটা অন্য একটা যুদ্ধ।”
I have received a shocking email from BRAC indicating that Sir Fazle Hasan Abed, the founder of @BRACworld has passed away. Sir Fazle has been an icon of international development whom we have closely worked with, through the Mastercard Foundation. May his soul Rest In Peace. pic.twitter.com/5aD5Xbm6U9
— Barnabas Nawangwe (@ProfNawangwe) December 20, 2019
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন লিখেছেন, “এনজিও নিয়ে আমার মনোভাব সবসময় নেতিবাচক। কিন্তু স্যার ফজলে হাসান আবেদকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করতাম। তার বহুমুখী কর্মের জন্য। আমাদের দেশে ক্ষুদ্রঋণের বিস্তার ও ব্যবহার নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এরমধ্যে ওনার প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক সত্যিকারের উন্নয়নে কাজ করেছে।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুধু দেশে নয় এশিয়া ও আফ্রিকার ১১ টি দেশে ক্ষুদ্রঋণের বিস্তার ঘটিয়েছেন। দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। এনজিও নিয়ে যখন বিখ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিজের আখের গোছানোর অভিযোগ সেই দিক থেকে তিনি ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। কেউ দারিদ্র বিমোচন করেছেন, আর কেউ কেউ দারিদ্রতাকে পুঁজি বানিয়ে ব্যবসা করেছেন।
তিনি এনজিও চালিয়ে অন্যদের মত ব্যবসা করেননি, অনেক সামাজিক কাজকর্মও করেছেন। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষা পৌঁছে দিয়েছেন ব্র্যাক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। ব্র্যাক ব্যাংকের মতো উচ্চ বেতনের ব্যাংক তৈরী করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়েছেন।”
এদিকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। বাংলাদেশকে ভেতর থেকে বদলে দেওয়া এই ব্যক্তিত্বের কফিনে ফুল দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে অনুষ্ঠিত হবে জানাজা। জানাজা শেষে স্যার ফজলে হাসান আবেদকে বনানী কবরস্থানে তার প্রথম স্ত্রী আয়েশা আবেদের পাশে সমাহিত করা হবে।