বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন ফারদিন নুর পরশের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। র্যাবও বলছে একই কথা। এ দাবির প্রেক্ষিতে ‘আত্মহত্যার প্রমাণ’ দেখতে ডিবির আহ্বানে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে সংস্থাটির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা আলোচনার করেছেন তারা। আলোচনার সময় ‘আত্মহত্যার প্রমাণ’ সম্পর্কে ডিবির তদন্তের বিস্তারিত তথ্য জেনেছেন। এরপর তারা বলেছেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় কিছু গ্যাপ আছে, কিছু অস্পষ্টতা আছে। এগুলো নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়ার দরকার আছে।’
তবে ডিবির কর্মতৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেরিয়ে বুয়েট ছাত্র তাহমিদ হোসেন বলেন, ‘ডিবির তদন্তের যে আলামতগুলো ছিল, তারা সেগুলো আমাদের দেখিয়েছে। আলামতগুলো আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। এগুলোর পেছনে তারা বেশ “এফোর্ট” দিয়েছে বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় হয়তো কিছু গ্যাপ আছে, কিছু অস্পট আছে। এগুলো নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়ার দরকার আছে। এগুলো নিয়ে তারা সামনে আরও কাজ করবে বলে আশা করি। এ ব্যাপারে তারা আমাদের একটা আশ্বাস দিয়েছেন।’
তাহমিদ হোসেন আরও বলেন, ‘একটা গ্যাপ হলো, ব্রিজের যে পারে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে যে মাঝখানে ব্যাক করেছে, ওই জায়গায় তার সঙ্গে কে ছিল বা সে একদম একা ছিল কি না—এ বিষয় পরিষ্কার নয়। লেগুনাচালক নাকি বলেছেন, দুজনকে নামানো হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আরেকজন নেমেছিলেন। কে নেমেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয়। এর বাইরে অন্য জিনিসগুলোর কংক্রিট অ্যাভিডেন্স তাঁরা টু অ্যান এক্সটেন্ট দেখিয়েছেন। তাঁরা আমাদের কিছু সারকামস্ট্যানশিয়াল অ্যাভিডেন্স দেখিয়েছেন, যা দেখে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ওই রকম কংক্রিট, সলিড কোনো তথ্য, অতটা তাঁরা দেখাননি। আত্মহত্যার মোটিভটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় কি না, এ জায়গায় ভবিষ্যতে কাজ করা যেতে পারে। ডিবি বলেছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করবে।’
বুয়েটে ফিরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী অবস্থান জানানো হবে বলে জানান তাহমিদ।
এর আগে, বুধবার ফারদিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত নিয়ে ডিবি জানায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ‘আত্মহত্যা’র পেছনের কিছু কারণের কথাও উল্লেখ করে ডিবি। একইদিন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দাবি করেন, ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সব সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনা করে আমাদের তদন্তে বের হয়ে এসেছে, বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান।
প্রসঙ্গত, গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূরের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা হয়। ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলার পর গত ১০ নভেম্বর ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে- এমন নানা তথ্যের মধ্যেই তদন্তে তার আত্মহত্যার তথ্য জানালো ডিবি।