উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সংযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের জ্ঞানের ভান্ডার সিংড়া উপজেলার ১৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাউটার প্রদান করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক ও প্রতিনিধিদের হাতে একটি করে ওয়াইফাই রাউটার তুলে দেন তিনি। এসময় তিনি জানান, আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা দেশজুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ লাখ ৯ হাজার হাজার উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হবে। কীভাবে আগামী ১ বছরের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার সংযোগ পৌঁছে দেয়া যায় সেজন্য গতকালই নির্দেশনা দিয়েছেন আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পাশাপাশি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট ও মাল্টিমিডিয়া ল্যাবের পাশাপাশি অল্পদিনের মধ্যেই ৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব করা হবে।
এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আজ যখন আমরা প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছি, ৪১ সাল নাগাদ সন্তানদের জন্য উন্নত সমৃদ্ধ উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছি তখন দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে আবারো উঠে-পড়ে লেগেছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একদিনে ৩৬০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানে পাঁচটি বিষয় (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) উল্লেখ করেন। তারপর চার দশকেও আর কোন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা বা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই সেটা করতে পেরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, একদিনে ২৬০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ করলেন। শতভাগ বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত করেছেন তিনি। আমাদের এই সিংড়ার ৩০ শতাংশ ঘরেও বিদ্যুৎ ছিলো না। কিন্তু আজ আমাদের তরুণ প্রজন্ম এক-আধাঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে গালাগালি করে। তারা জানে না, ২০০৭, ২০০৬, ২০০৫ সালে এই বাংলাদেশের অবস্থা কী ছিলো।
‘যেভাবে ৭১ এর পরাজিত অপশক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে উন্নয়ন, আগ্রযাত্রা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হত্যা করতে চেয়েছিল। ঠিক একই রকমভাবে যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম ও উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আবার দেশী-বিদেশী সেই অপশক্তিরা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে’- যোগ করেন পলক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশ হবে একটি বিজ্ঞান মনস্ক জাতি। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত। এজন্য তিনি ডঃ কুদরতই খুদা শিক্ষা কমিশন করেছিলেন। কেননা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হচ্ছেন ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। কারণ আমাদের আজকের শিশু কিশোরদের আপনারা যেভাবে গড়ে তুলবেন, আগামী দিনের বাংলাদেশ কিন্তু সেভাবেই গড়ে উঠবে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই। অথচ একটি চক্র দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং সার মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, যাতে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। কিন্তু তাদের সেই সড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। আপনারা সতর্ক থাকুন। কোন মিথ্যা অপপ্রচারে কান দিবেন না।
তিনি বলেন, কোনো ডিলার সার মজুদ করে যদি দাম বেশি নেয়, সার নেই বলে গুদামজাত করে আর তাতে যদি কোনো কৃষকের ভোগান্তি হয়, তাহলে সেই ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ন্যায্য দামে সার বিক্রি করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের সার প্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই সার মজুদ করা যাবে না। বিষয়টি প্রশাসন ও আমি মনিটর করব।
সবাইকে সমাজ ও দেশ বিরোধী চক্রান্ত বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্পের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের মেধার স্ফূরণের জন্য ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথের মতোই কোডিং, প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এ বছর প্রাথমিকে ডিউ পার্টে প্রবলেম সল্ভিং অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে ন্যাশনাল কারিকুল্যামে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। এটা শিখে তারা ভবিষ্যত বিশ্বের সঙ্গে শুধু তালই মেলাবে না নেতৃত্বও দেবে।
সিংড়া উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা হক রোজি, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী আশরাফ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবুরুশত মতিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।