নিরাপত্তা দুর্বলতার অভিযোগে গত বছরজুড়ে হুয়াওয়ের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ। অথচ একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি ফেসবুক ও গুগলের মতো ডিজিটাল জায়ান্টগুলোর বিরুদ্ধে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গ্রাহক তথ্য কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এখনো তেমন কোনো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেনি মার্কিন সরকার। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, প্রকৃত অর্থে কি সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকও সার্চ জায়ান্ট গুগলের চেয়ে হুয়াওয়ে বেশি বিপজ্জনক? নাকি এক্ষেত্রে দ্বৈত ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র?
এমন প্রশ্নে আটকে গেছে দেশটি। কেননা, চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করছে এমন অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি অথচ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফেসবুক ও গুগলের গ্রাহক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম প্রযুক্তিবিশ্বে সবারই জানা।
গ্রাহক তথ্যের অপব্যবহার নিয়ে গত বছর একাধিকবার সিনেট শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ এবং গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই এসব শুনানিতে গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ ও তা বিভিন্ন ব্যবসায় কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকারও করা হয়েছে। অর্থাৎ ফেসবুক ও গুগলের দ্বারা গ্রাহক তথ্যের অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও উভয় প্রতিষ্ঠান বহাল তবিয়তে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
অন্যদিকে শুধু আশঙ্কানির্ভর অভিযোগের ভিত্তিতে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি স্থবির করে দেয়া হয়েছে। এটা কতটা যৌক্তিক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সুরটি আরো জরালো হচ্ছে। এখন তীর্যক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছে মার্কিন সরকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হুয়াওয়ের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জামে সূক্ষ্ম ব্যাকডোর আছে বলে যে প্রশ্ন তুলেছেন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তা খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুয়াওয়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সরকারের যে উদ্বেগ, তা না হয় বাস্তব তবে যুক্তরাষ্ট্রের সোস্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন উদাসীন? ফেসবুক ও গুগলের মতো মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো তো এখনই গ্রাহকতথ্য নিজেদের খুশিমতো কাজে ব্যবহার করছে এটা আর এমন কি? নিজেদের গ্রাহক তথ্যে তৃতীয় পক্ষের অংশীদারদেরও প্রবেশাধিকার দিচ্ছে ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, টেলিকম সরঞ্জামের নিরাপত্তা ত্রুটি বা ব্যাকডোর নয়; বড় সমস্যা হলো হুয়াওয়ে চীনভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। বস্তুত বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলকে এরই মধ্যে পেছনে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাহলে কি সে কারণেই এই অবস্থান নিয়েছে দেশটির সরকার? তবে যে উদ্দেশ্যেই হোক, ফাইভজি প্রকল্প থেকে হুয়াওয়ের পণ্য বর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক ধাপ পিছিয়ে পড়েছে বলে মত বাজার বিশ্লেষকদের।