খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরায় উচ্চগতির ইন্টারনেট জিপন উদ্বোধন
খুলনা বিভাগ এবং সাতক্ষীরা ও যশোর জেলায় উচ্চগতির সরকারি ইন্টারনেট সেবা ‘জিপন’ এর উদ্বোধন করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়াও সাতক্ষীরায় হার পাওয়ার প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত কলারোয়া, তালা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নারী আইটি সেবাদাতা ক্যাটাগরীর মোট ২৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ল্যাপটপ উপহার দেন তিনি। একই দিনে যশোরে মোবাইল অপারেটর রবি’র সিস্টার কনসার্ন অ্যাকজেনটেক এর ‘টায়ার-৪’ বাণিজ্যিক ডেটা সেন্টার ‘সাইফার’ উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড পরিদর্শন শেষে একটি বিভাগ ও দুইটি জেলায় জিপন এর নতুন ডেটা সেবার উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী। এর ফলে সাতক্ষীরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ভবনে বিটিসিএলের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইন্টারনেট জিপন ৩০৭২ সংযোগ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সেবা, খুলনায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে ৮০০০ সংযোগ ধারণ ক্ষমতার জিপন সেবা এবং যশোর এক্সচেঞ্জ ভবনে ৩০০০ সংযোগ ধারণ ক্ষমতার জিপন সেবা চালু হলো।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী মহান ভাষা শহিদদের স্মরণে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের স্মরণে জিপনের বিশেষ সাশ্রয়ী মূল্যের প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
খুলনায় বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় কালে পলক বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট ক্যাবল শিল্প গড়ে তুলতে হবে। স্মার্ট ক্যাবল শিল্পের জন্য স্মার্ট সম্পদ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। এই লক্ষে ডাক ও টেলিযোাগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেডকে স্মার্ট বাংলাদেশ যুগের উপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আয় বৃদ্ধি এবং অপচয় কমিয়ে আয়-ব্যয় -এ দুয়ের ভারসাম্য রেখে সংশ্লিষ্টদের প্রতিষ্ঠানটিকে অধিক লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন পলক। বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জগদীশ চন্দ্র মন্ডল-কে এসময় বিদেশে ক্যাবল রপ্তানির উদ্যোগ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মান যাচাইয়ে সার্টিফিকেশন চালু করতে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী।
এসময় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ ও কোম্পানি সচিব মোঃ আরিফুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘হার পাওয়ার প্রকল্পে’র ২৪০ নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ করেন জুনাইদ আহমেদ পলক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন টুম্পা ও নাজমুন নাহার। তারা সাতক্ষীরায় আইটি পার্ক তৈরির দাবি জানান।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-১ আসনের সদস্য সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য প্রার্থী লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে ফজলুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হার পাওয়ার প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিজিটাল খাতে দেশের ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সেবা। প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ২০ লাখের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এ খাত থেকে ইতোমধ্যে সরকার দুই মিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও সরকারের সব সেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।’
অপরদিকে যশোরের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অ্যাকজেনটেক পিএলসি আয়োজিত “টায়ার-৪ ডেটা সেন্টার সাইফার” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমাদের অজান্তে আমাদের ডেটা বিক্রি করে, প্রসেস করে যেন কেউ ব্যবস্যা করতে না পারে সেজন্য ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। প্রতিমুহূর্তে আমরা মূল্যবান ডেটা সরবরাহ করছি। আমরা যদি এই ডেটার নিরাপত্তা, মজুদ, লোকালাইজেশন ও প্রসেস করতে পারি, তাহলে ডেটা ড্রিভেন (তথ্য নির্ভর মার্কেটিং) ও ডিসিশন মেকিং স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সহজ হবে। বেসরকারিখাতে ব্যবসার আরও অনেক সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশের ও নাগরিকদের ডেটা আমাদের অনুমতি ব্যতীত আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না, আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএসএম জাফরউল্লাহ্ এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাকজেনটেক পিএলসি’র এমডি ও সিইও আদিল হোসেন নোবেল, অ্যাকজেনটেক বোর্ড চেয়ারম্যান রাজীব শেঠি ও পরিচালক ব্যারিস্টার সাহেদ আলম।
একই দিনের সফরে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এর টুটপাড়া মৌজায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃক জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলায়) প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন “নলেজ পার্ক, খুলনা” এর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী।