‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল। রাত দেড়টায় অনুষ্ঠিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণার পরই সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা পত্র দেয়ার বিষয়কে স্বাগত জানিয়ে শুরু হয় আলোচনা। প্রতিকূলতা পেরিয়ে মার্চ ফল ইউনিটিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। আবারো লাল রঙ এর ব্যানার বাড়তে শুরু করেছে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নির্দেশনা অনুযায়ী, গাবতলী হয়ে ঢাকা মহানগরে প্রবেশ করা যানবাহনগুলো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আগারগাঁও এলাকার পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে পার্কিং করবে। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী প্রবেশপথ দিয়ে আগত যানবাহন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় পার্কিং করবে। আব্দুল্লাহপুর হয়ে প্রবেশ করা যানবাহন ৩০০ ফিট এলাকায় পার্কিং করবে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে এমন সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষ পর এই সম্মেলন করে ছাত্ররা। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত, ঐক্যের ভিত্তি ও জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হবে।
এই ঘোষণার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে জানানো হয়, হাজারো শহীদ ও আহতযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জন-আকাঙ্ক্ষার দলিলস্বরূপ “জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র” অত্যাবশ্যক ছিলো। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই এঁতিহাসিক ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম।
আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্কূর্ত ও ইতিবাচকসাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্র- জনতার আহবানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশেরআপামর জনসাধারণের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান- আপনারা যে উদ্দীপনায় সংগঠিত হয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীকালের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কর্মসূচি আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবারই করার ঘোষণাা দেন মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকশ শিক্ষার্থীকে। ‘সিদ্ধান্ত কে দেবে, বিপ্লবী না সরকার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ এই ধরনের স্লোগান শোনা যায় তাদের মুখে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সোমবার রাতে ঘোষণা আসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তারা রাত ১২টায় ব্রিফ করা হবে। সেখান থেকে আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঘোষণাপত্র কীভাবে দেওয়া হবে, তা জানানো হবে মঙ্গলবার বিকেলে।
রাত দেড়টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাজারও শহীদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জনআকাঙ্ক্ষা স্বরূপ জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র অত্যাবশ্যক ছিলো। এটি প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা এটি প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ছাত্র-জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এ সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
এসময় সারজিস আলম বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার পুরো বাংলাদেশকে একটি ঐক্যবদ্ধের জায়গায় এনে দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। ডকুমেন্ট হিসেবে এটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যাওয়া উচিত। আমাদের মনে হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেয়ে রাষ্ট্র যখন দায়িত্বটি নিয়েছে আমরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। এটি আমাদের সংবিধানে পিএমএল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলে এর স্থায়িত্ব এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অপর সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ বলেন, ঘোষণাপত্রের পক্ষে আগামীকাল এদেশের মানুষ অবস্থান নেবে এবং এই ঘোষণাপত্র কিভাবে হবে সেটা আমরা আগামীকাল সেখানে (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) বলে দেবো।
তিনি বলেন, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থান আমার ভাইয়ের চোখের বিনিময়ে অর্জিত গণ অভ্যুত্থান। আমরা এই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছি, আমরা রাষ্ট্রকে বলেছি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেন আমাদের সহায়তা দেয়া হয়। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গিয়েছি। সকলে যেন আমাদের এখানে সমর্থন জানায়, আমরা বলেছি যেন প্রত্যেকে যেন এটা গ্রহণ করে কারণ ঘোষণাপত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল। কিন্তু এই ঐতিহাসিক দলিল যেন আমরা প্রস্তাব করতে না পারি সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে বিজয় লাভ করেছি।
মাসউদ বলেন, সরকার আমাদের এই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা অবশ্যই আমরা শহীদ মিনার একত্রিত হব। আমরা আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি দিয়েছি আমরা শহীদ মিনারে বিপ্লবী জনতা একত্রিত হব। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র আসবে কিন্তু তাই বলে আমাদের একত্রিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না। আমরা এদেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলবো এই প্রক্লেমেশন যেন আমরা করতে না পারি সে জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার বলেছে সকলের পক্ষ থেকে তারা ঘোষণাপত্র দিবে। কিন্তু আমরা আগামীকাল প্রক্লেমেশনের পক্ষে সারা দেশের মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাই।