মোবাইলের আনলিমিটেড (মেয়াদ-বিহীন) ডাটা প্যাকেজ এবং নিরবচ্ছিন্ন মাসিক ইন্টারনেট প্যাকেজের উদ্বোধন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এই ঘোষণা অনুযায়ী, ক্যারিফরোয়ার্ডে এখন থেকে আনলিমিটেড (মেয়াদ-বিহীন) ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ হবে এক বছর। আর অপর প্যাকেজে দিনে এক জিবি করে মাস ওয়ারি থাকছে নতুন এই ডেটার প্যাকেজ নির্দেশনায়।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) রমনায় বিটিআরসি কার্যালয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে তিনি ইন্টারনেট এখন সব মহলের কাছেই নগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনায় এসেছে বলে মত দেন।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান। এর রূপরেখার প্রতিফলন এখন সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি স্তরে দেখা যাচ্ছে। এটি পরিমাপের জন্য এখন ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের ডেটা থেকে দেখার প্রয়োজন নেই। আমরা এখন কি পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করছি তা দেখলেই চলবে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমাদের ডেটার ব্যবহার বেড়েছে ১২১৮ শতাংশ।
বক্তব্যে সাব মেরিনক্যাবল স্থাপনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়াদহীন এই ডাটা প্যাকেজের বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন বিটিআরসি’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ।
প্রাথমিকভাবে আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজের মধ্যে গ্রামীণফোনে ১ হাজার ৯৯ টাকায় ১৫ জিবি ও ৪৪৯ টাকায় ৫ জিবি প্যাকেজ কিনতে পারবেন।
রবিতে ৩১৯ টাকায় ১০ জিবি, বাংলালিংকে ৩০৬ টাকায় ৫ জিবি এবং টেলিটকে ৩০৯ টাকায় ২৬ জিবি ও ১২৭ টাকায় ৬ জিবি পাওয়া যাবে।
প্রাথমিকভাবে আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজের মধ্যে গ্রামীণফোনে ১ হাজার ৯৯ টাকায় ১৫ জিবি ও ৪৪৯ টাকায় ৫ জিবি প্যাকেজ কিনতে পারবেন।
রবিতে ৩১৯ টাকায় ১০ জিবি, বাংলালিংকে ৩০৬ টাকায় ৫ জিবি এবং টেলিটকে ৩০৯ টাকায় ২৬ জিবি ও ১২৭ টাকায় ৬ জিবি পাওয়া যাবে।
মেয়াদহীন এই প্যাকেজে গ্রামীণ ফোনের প্রতিজিবি ডেটার দাম পড়বে প্রায় ৯০ টাকা; বাংলালিংক এর প্রতি জিবির দাম পড়ছে ৬১ টাকা এবং রবি’র প্রতি জিবি পড়বে ৩১ টাকা ৯০ পয়সা।
এসএমপি অপারেটর হিসেবে এই প্যাকেজে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ইন্টারনেট হবে গ্রামীণফোনের।
আর রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিটকের ১২৭ টাকায় ৬জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজে প্রতি জিবির দাম পড়বে ২১ টাকা এবং ৩০৯ টাকার ২৬জিবির প্যাকেজে প্রতি জিবির দাম পড়বে ৯ টাকা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার মৈত্র। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবঃ)।
এর আগে মেয়াদের বিষয়গুলো তুলে ধরার সময় টেলিকম মন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়ে গ্রামীণফোন। গ্রাহকের সম্মতি নেয়ার বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় ভাবে না নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সম্প্রতি ডেটা প্যাকেজ কমিয়ে ২৯২টি থেকে ৮৫টিতে নামিয়ে আনার পর আমরা অপারেটরগুলোকে একটা নির্দেশনা দিয়েছিলাম। এরই পরিক্ষেত্রে তখন মাননীয় মন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে টেলিটক তৎক্ষণাত ২টি আনলিমিটেড প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলো।
যারা টেলিকম সেবার মূল্যায়ণ করেন তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিটিআরসি কখনোই অপারেটরদের পক্ষে ছিলো না। এবং থাকবে না। তার প্রমাণ হিসেবে অচিরেই আরো কিছু কঠোর পদক্ষেপ আপনারা দেখতে পাবেন। ইতিহাস ও তথ্য ঘেঁটে আপনারা মন্তব্য করবেন বলে আশা করি। আমরা সবসময় গ্রাহকের পক্ষে কাজ করে। আমরা সেবার মান নিয়ে অনেকক্ষেত্রেই আমরা অতৃপ্ত। এমনকি বিরক্ত। জনস্বার্থেই আমরা কঠোর হবো। জরিমানা করবো।
আনলিমিটেড ডাটা প্যাকের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিটিআরসিকে ধনব্যাদ জানিয়ে অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব:) বলেন, টেলিকম অপারেটররা সবসময় গ্রাহকবান্ধব এবং সর্বোত্তম সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে। টেলিকম খাতে যেকোনো সেবা চালু করতে অপারেটরদের প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গ্রাহক চাহিদার ভিন্নতা বেশি থাকায় প্যাকেজ চালু করতে সময়ের প্রয়োজন হয়।
গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার সাজ্জাদ হাসিব বলেন, বাংলাদেশের বাজারে আনলিমিটেড অফার এর প্যাকেজ মাধ্যমে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। আগামী বিশ বছের বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনীতি করার জন্য সরকারের উদ্যোগের সাথে গ্রামীণফোন কাজ করবে।
রবির চিফ কমার্সিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদ বলেন, নেটওয়ার্ক বিস্তারের প্রতিযোগিতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহক সেবা দিতে সব অপারেটরগুলো চেষ্টা করছে। বর্তমানে বেশিরভাগ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেছ, আমরা বিনোদনের বাইরেও মানুষের দৈনন্দিন অন্যান্য কাজেও যাতে ডাটার ব্যবহার হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে।
আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজর ওপর গ্রাহেকর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, গ্রাহককে আরো বেশি ডাটা ব্যবহারে উদ্ধৃত্ত করতে আমরা এই প্যাকেজ চালু করেছি এবং এর মাধ্যমে গ্রাহক ডাটার যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে।
রবির চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ শাহেদুল আলম বলেন, টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে অপারেটর ও বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম খাতে বিদ্যমান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার ওপর গুরুত্ব প্রদানে বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, আমাদের এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে, তারপরেও গ্রাহকদের স্বার্থে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস) প্রকৈাশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগে: জেনা: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডু, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামানসহ বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।