ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতিসংঘ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণকে ঐতিহাসিক ঘটনা এবং জাতি হিসেবে গর্বের বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। একইসঙ্গে বাংলাদেশে ব্যান্ডউথের সমস্যা এখনো নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না উল্লেখ করে ইন্টারনেটের দাম অধিক সুলভে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
সোমবার বিকালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রধান সম্মেলন কক্ষে টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই তথ্য দেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যে ব্যান্ডউথের চাহিদা হবে তা সিমিউই-৪ (SEA-ME-WE-4), ও সিমিউই-৫ (SEA-ME-WE-5), ও আইটিসি এর মাধ্যমে যোগান দেয়া সম্ভব হবে। এরপর সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যান্ডউইথের যে চাহিদা বাড়বে তা সিমিউই-৬ (SEA-ME-WE-6) এর মাধ্যমে পুরণ করা যাবে।
পরবর্তীতে কমিশনের মহাপরিচালক (সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস) ব্রিগে: জেনা: মোঃ নাসিম পারভেজ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লক্ষ্যমাত্র অর্জনের বিশদ তথ্য উপস্থাপনা করেন।
তিনি বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে গত বছর জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে বিশ্বের ৯৬টি দেশ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে ৬৪টি দেশ। তিনি আরো জানান, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বের বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত দেশে ইন্টারনেটের দাম জাতিসংঘ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল। তবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার ও নেপাল জাতিসংঘ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশন ইন্টারনেটের দামের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। লক্ষ্য অনুযায়ী, একটি দেশের জাতীয় মাথাপিছু আয় যা হবে, তার ২ শতাংশের কম খরচ হবে ইন্টারনেট বাবদ। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যেই ছিল। ইন্টারনেটের দাম পর্যালোচনাকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান কেব্ল ডটকো ডটইউকের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২৩০টি দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের কম দামের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ নম্বরে।
ক্রয়সক্ষমতার সমতায় ব্রডব্যান্ডে ভারত-পাকিস্তান থেকে উন্নয়নে এগিয়ে বাংলাদেশ
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, দেশে ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি বাড়ানোর প্রক্রিয়া ও চলমান থাকবে এবং ভবিষ্যতে জনগণ আরো সুলভে ইন্টারনেট সেবা পাবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল ভিত্তি হলো সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান। এ লক্ষ্যে বিটিআরসি ইতোমধ্যে সারাদেশে এক দেশ এক রেট সেবা চালু করেছে এবং তা জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা করা হচ্ছে। এতে আগের চেয়ে গুণগত মানে ইতিবাচক ফলাফল এসেছে এবং গুণগত মান নিশ্চিতে বিটিআরসি ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস) প্রকৈাশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো: দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগে: জেনা: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (ইএন্ডও) ব্রিগে: জেনা: মো: এহসানুল কবীর, মহাপরিচালক (লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডু, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামানসহ বিটিআরসি উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও টেলিকম ও টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ( টিআরএনবি) এর নবগঠিত কমিটির সকল সদস্যসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগন এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় মন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নতুন কমিটি।