সরকারের পকেট ভারী হলেও গ্রাহকের পকেট শূন্য হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনের সভাপতি দাবী করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা তরঙ্গ বরাদ্দ দিতেও অপারেটরদেরকে নিতে সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেছি।
কারণ যাতে করে অধিক তরঙ্গ দিয়ে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন করা হয়। এমনকি প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এর দাম কমিয়েও জনগণের সেবার মান বাড়াতে সরকারের সব পক্ষের সাথে আমরা আলোচনা ও আবেদন করেছিলাম। অবশেষে গতকাল তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। কিন্তু বর্তমানে দেশে ১৭ কোটি ১৮ লক্ষ গ্রাহকের বিপরীতে নিলামে ওঠা ২৭.৪ মেগাহার্জ তরঙ্গ অপর্যাপ্ত।
এই তরঙ্গ নিলামের মাধ্যমে সরকার৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ঘরে তুলতে পারছে। বিনিময় গ্রাহকদের যে কাংখিত সেবা পাবার কথা তা খুব একটা অর্জিত হবে বলে মনে হয় না, ফলশ্রুতিতে গ্রাহকদের পকেট শূন্য এ কথা বলা যায়। মহিউদ্দিন আহমেদ এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গ্রাহকদের চাহিদা প্রচুর তারা সেবা পেতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করলেও কাঙ্খিত সেবা পাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, গ্রামীণফোন গতকাল নিলামে ক্রয় করেছে ১০.৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। পূর্বের মিলিয়ে ৯০০,১৮০০ ও ২১০০ ব্র্যান্ড মিলিয়ে সর্বমোট তরঙ্গ দাঁড়ালো ৪৭.৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। অর্থাৎ তাদের মোট গ্রাহক ৭ কোটি ৮১ লক্ষ গ্রাহক এর বিপরীতে তারা ব্যবহার করতে পারবে যে তরঙ্গ তা গ্রাহক অনুপাতে দাঁড়ায় ২০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ, অথচ জিপির কোম্পানি টেলিনর অন্য দেশে এক লক্ষ গ্রাহক এর বিপরীতে ব্যবহার করছে এক মেগাহার্জ তরঙ্গ। রবি আজিয়াটা ৯০০,১৮০০ ও২১০০ ব্র্যান্ড মিলিয়ে সর্বমোট কালকের ক্রয়সহ তরঙ্গ দাঁড়ালো ৪৪ মেগাহার্জ। তাদের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ১৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ গ্রাহকের জন্য এক মেগাহার্জ তরঙ্গ। বাংলালিংকের ৯০০,১৮০০ ও ২১০০ মিলিয়ে গতকাল নিলামের তরঙ্গ সহ দাঁড়ায় ৪০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। তাদের বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ। অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে এক মেগাহার্টজ তরঙ্গ। আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক নতুন করে তরঙ্গ না কেন তাদের অবস্থান পূর্বের মতোই। টেলিটকের প্রায় ৫৫লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তাদের ব্যবহৃত ২৫.২ মেগাহার্জ তরঙ্গ। অর্থাৎ ২লাখ১৫ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। গতকাল নিলামের তরঙ্গ ও পূর্বে ব্যবহৃত তরঙ্গ মিলিয়ে বর্তমানে ৪টি অপারেটর এর মোট ব্যবহৃত তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ। অথচ অন্যান্য দেশে একটি অপারেটরে এর চাইতে বেশি পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করে।
প্রতিদিনই নিয়ন্ত্রক কমিশন সহ আমাদের কাছেও বিপুল সংখ্যক গ্রাহক সেবার মান সঠিক না পাবার অভিযোগ করে আসছে। আমরা সহ সরকার ও বেসরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছিল এতদিন যাবৎ যে স্বল্প পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করার কারণেই সেবার মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না- যোগ করেন তিনি।
মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে তরঙ্গ ব্যবহার যাতে অপারেটররা করে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু নিলামে স্বল্প তরঙ্গ বরাদ্দ করা এবং উচ্চমূল্যের ফুলে রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক তরঙ্গ ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতেই অনুমেয় যে এই তরঙ্গ নিলামের ফলে এবং স্বল্প পরিমাণ তরঙ্গ বরাদ্দের ফলে গ্রাহক সেবার মান কতটুকু উন্নয়ন হবে সেটি আজ প্রশ্ন দায়ক। তাই আমরা মনে করি এই তরঙ্গ বরাদ্দের ফলে সরকারের পকেট ভারী হবে সত্যি কিন্তু গ্রাহকদের পকেট শূন্য হতে থাকবে, কাঙ্খিত সেবা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিই থেকে যাবে।