টেলিকম নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রতিযোগিতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
সিপিবি’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আবু সালেহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এড. ইয়ারুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু বককর সিদ্দিক, কেন্দ্রীয় সদস্য আমানউল্লাহ মাহফুজ, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ মোবাইল রিচার্জ এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে দ্রুত নেটওয়ার্ক এর মানোন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতায় আনার পাশাপাশি ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সংগঠনের দাবি-দাওয়ার প্রতি সংহতি জানিয়ে সিপিবি’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, করোনা প্যানডেমিকের মধ্যে সবকিছুই চলে কিন্তু চলে না শুধু শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা খাত আজ ধনীদের দখলে। উচ্চমূল্যের ডেটা ও উচ্চমূল্যের ডিভাইস দরিদ্র জনগোষ্ঠির কিনতে পারছে না। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক হচ্ছে না। আজ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির ভুলনীতি ও মূলনীতি না মানার কারণে এবং কমিশন বাণিজ্যের কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। টেলিটককে আজ বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় না এনে একেও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ তরঙ্গকে কুক্ষিগত করে রেখে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার সকল ব্যবস্থাই করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৯০ দশকের পর ২জি টেলিকম সেবার দ্বার উন্মুক্ত হবার পর এ সেবার গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রযুক্তির পরিবর্তন ও চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সেবার উপর মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে ৩জি প্রযুক্তির ইন্টারনেট ও ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে দ্রুতগতির ৪জি ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে সক্রিয় সীম রয়েছে ১৬ কোটি ৩৪ লক্ষ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ২১ লক্ষ ১৩ হাজার। ৩জি ব্যবহারকারী ৬১.৬৬৩ মিলিয়ন। ৪জি ব্যবহারকারী প্রায় ১৯.৩১ মিলিয়ন। ডেটার ব্যবহার ১০ জিবিপিস থেকে বেড়ে ১২০০জিবিপিএসে দাঁড়িয়েছে। অথচ সেবার মান কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। ইন্টারনেটের গতি কমে দাঁড়িয়েছে ২ থেকে ৩ এমবিপিএস। অথচ চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ এমবিপিএস গতির। কলড্রপ ও ইন্টারনেটের ধীরগতি গ্রাহকদের বিরক্তি বাড়িয়ে তুলেছে। গ্রাহকরা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও তার কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ায় গ্রাহক অসন্তোষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতভাগ।
দাবিসমূহ:
১। অপারেটর অনুপাতে তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়ে নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন করতে হবে
২। তরঙ্গের দাম কমিয়ে অপারেটরদের কল রেট ও ডাটার মূল্য কমাতে বাধ্য করা
৩। প্রযুক্তি নির্ভর টেলিযোগাযোগ সেক্টরে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহে যথোপযুক্ত কারিগরি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করে মার্কেটে তাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সরকারি খাতে জাতীয় অবকাঠামো হিসেবে যথেষ্ট পরিমানে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
৪। টেলিটকের উন্নয়নে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে
৫। সরকারি-আধা-সরকারি, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে টেলিটক ব্যবহার করতে বাধ্য করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদে সংশ্লিষ্ট সেক্টরে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করতে হবে। সরকার সংশ্লিষ্ট নীতিমালাসমূহে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংযোজনের মাধ্যমে বিদ্যমান অসমাঞ্জস্যপূর্ণ বাজারে সরকারি কার্যক্রমের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা উল্লেখিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বিষয়ক নীতিসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেক্টরের কর্মকৌশলে প্রতিফলন ঘটাতে হবে
৬। সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে
৭। বিটিসিএলকে জবাবদিহীতার আওতায় এনে গ্রাহকবান্ধব করতে হবে
৮। বিটিসিএল’র ৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটের দাম ১০০ টাকা ও ১০ এমবিপিএস গতির মূল্য ২০০ টাকা নির্ধারণ করে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রসারে কার্যক্রম শুরু করতে হবে
৯। টেসিস কে কার্যকর করে আন্তর্জাতিকমানের এক্সেস তৈরীর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে
১০। অপারেটরদের বিনা শুল্কে হ্যান্ডসেট আমদানির সুযোগ দিয়ে ভারতের জিও’র মতো ১ হাজার ৫০০ টাকায় ৪জি হ্যান্ডসেট ও সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে
১১। নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।