মূল ধারার গণমাধ্যমের বাইরে বর্তমানে অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক গণমাধ্যম বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। আর এর মাধ্যমেই এখন মোট ২১শত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার করছে দেশে ১১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
শনিবার রাতে বাংলাদেশ জার্নালিজম স্টুডেন্টস কাউন্সিল আয়োজিত বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী গণমাধ্যমের ভূমিকা ও রাজনীতি শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের সংবাদপত্র ও গণ মাধ্যমসমূহ তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি।বিশেষ প্রেস এডভাইস অবজ্ঞা করে তা করা সম্ভবও ছিল না।গণমাধ্যম ও রাজনীতি এক সুতায় গাঁথা। সে সময় সংবাদমাধ্যম সাহসী ভূমিকা রাখতে পারলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি কাটাতে হতো না। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংবাদপত্র অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পেরেছে বলেই মিথ্যা, কাল্পনিক ও মনগড়া বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে বঙ্গবন্ধু সরকারকে হেয় করা হয়েছে।
‘কারো পক্ষে এ জঘন্য মিথ্যাচার সহ্য করা সম্ভব ছিল না, অথচ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তীকালে গণমাধমের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যোগ করেন একসময়ের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফা জব্বার।
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. মো: গোলাম রহমান এর সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন ইনচার্জ আমানুর রহমান রাকাত এবং বাংলাদেশ জার্নালিজম স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি জাবিদ হাসান ফাহিম প্রমূখ এই সেমিনারে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজ এজেন্সি আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ সংস্থা আবাস এর প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সবচেয়ে স্বাধীন উল্লেখ করে বলেন, মূল ধারার গণমাধ্যমের বাইরে বর্তমানে অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক গণমাধ্যম বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা , জাতীয় চার নেতাকে জেল খানায় হত্যা করা কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ আগস্টসহ ২১বার হত্যা চেষ্টা করা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়।এটি বাংলাদেশকে ধ্বংস করার দেশি বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র।১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, খুন করার চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে।পাকিস্তানী ধারায় অভ্যুত্থানের আরেকটি ধাপ বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল।যুদ্ধের ধ্বংশস্তুপের ওপর থেকেও বঙ্গবন্ধু দেশের জিডিপি ৭দশমিক ৫ভাগে উন্নীত করেছিলেন। কুচক্তি মহল উপলব্ধি করেছিলো যে জাতির পিতাকে হত্যা না করলে বাংলাদেশের বিকাশ বন্ধ করা যাবেনা। আর বঙ্গবন্ধুর খুনি কে, তা মাজেদের জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে। কে পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন তা জাতির কাছে পরিস্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, বাঙালি ভাগ্যবান তারা একজন বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছিলো। আমরা ভাগ্যবান তার রক্তের উত্তরসূরী শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। তার হাত ধরেই জাতির পিতার লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হচ্ছে। উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের রূপান্তরের জন্য ২০ বছরের দরকার নেই। আমরা ২০৪১ সালের আগেই জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবো।তিনি বলেন অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করেও আমরা শেখ হাসিনার শাসনকালের ১৬ বছরে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাকালে যতটা ডিজিটাল পর্যায়ে চলা উচিৎ সে দিক থেকে পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোর তুলনায় পিছিয়ে নেই।হয়ত অভিজ্ঞতার ঘাটতি কিছুটা আছে তবে ডিজিটাল অবকাঠামোর দিক থেকে আমরা বহুদূর এগিয়ে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালেও দেশে আট জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র আট লাখ। দেশে আজ ২১শত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দেশে ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
এসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে দেশমাতৃকার প্রতি ভক্তি নিয়ে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান মোস্তাফা জব্বার । তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রথমেই একটি জাতি স্বত্বা গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে অসীম দূরদর্শিতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লড়াইকে এগিয়ে নিয়েছেন।
ড. গোলাম রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পত্রিকা ছাপা হয়েছে কিন্তু তা বিতরণ করতে দেওয়া হয়নি। রেডিও টিভি দখল হয়ে যায়। তখন গণতন্ত্র হরণ হয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ হয়ে যায়। বিদেশি মিডিয়া এবিসি ও সিভিসি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হয়েছে। সংবাদ বিশ্লেষণ প্রচারিত হয়েছে। বাকশাল গঠনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ ছিল সব রাজনীতির মিলিত স্রোত। অথচ না বুঝেই এটাকে নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে।