প্রায় ১৫ মাসের মাথায় ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ফিরে পাচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। রবিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডেটা এবং ডেটা–সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ–সম্পর্কিত নির্দেশিকায় ২০২৪ জারি করে উঠিয়ে নেয়া হলো ইন্টারনেটের ডেটা প্যাকেজ সংখ্যার সীমা।
ফলে এখন থেকে নির্দিষ্ট ভলিউমে ঘণ্টা ভিত্তিক ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর সুযোগ পেলো মোবাইল অপারেটররা। কেননা, এবার গ্রাহক স্বার্থ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতিঘণ্টা সর্বোচ্চ ২০০ এমবি এবং এক দিনে ৩জিবি, ২ দিনে ৫ জিবি ও ৩দিনে ৮ জিবি পর্যন্ত ডেটা ভলিউম প্যাকেজ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি অপারেটররা যেনো গ্রাহককেন্দ্রিক বিভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজও দিতে পারে সেই পথও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এর আগে বিটিআরসি ২০২৩ সালের অক্টোবরে সর্বেশষ যে নির্দেশিকা দিয়েছিল, তাতে প্যাকেজের সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল ৪০ এবং মেয়াদ ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড (নির্দিষ্ট মেয়াদহীন) করা হয়, যা নিয়ে অপারেটররা অসন্তুষ্টি জানিয়ে আসছিল। নতুন নির্দেশিকায় সেই অসন্তুষ্টির অবসান ঘটলো।
তবে রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ঘণ্টা–মিনিটভিত্তিক কোনো প্যাকেজ দেওয়া যাবে না।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সব গ্রাহকের জন্য উন্মুক্ত নিয়মিত প্যাকেজ; ব্যবহার ও গ্রাহকপ্রতি গড় রেভিনিউর ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির গ্রাহকের জন্য বিশেষ প্যাকেজ; বাজার বিশ্লেষণের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে। এরমধ্যে নিয়মিত প্যাকেজগুলোর মেয়াদ সর্বনিম্ন ১৫ দিন, গ্রাহককেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৩ দিন এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ সর্বনিম্ন ৭ দিন মেয়াদি হবে।
এই তিন প্যাকেজের বাইরেও গ্রাহকের স্বার্থ এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অপারেটররা নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্যাকেজ নির্ধারণ করতে পারবে। এছাড়াও গ্রাহক যাতে তার সুবিধা অনুযায়ী প্যাকেজ গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য ‘ফ্লেক্সিবল প্ল্যান’ হিসেবেও একটি পাকেজ থাকবে। থাকছে মেয়াদবিহীন বা আনলিমিটেড প্যাকেজও।
তবে আনলিমিটেডে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। যেকোনো প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে সে বিষয়ে জানাতে হবে। কোনো ডেটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডেটা থেকে গেলে, তা ‘ক্যারি ফরওয়ার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি গ্রাহক একই প্যাকেজ আবার কেনে, তাহলে পরের প্যাকেজে অব্যবহৃত ডেটা ব্যবহার করা যাবে।
নতুন নির্দেশিকায় যেসব প্যাকেজ ও মেয়াদ দেখা যাচ্ছে, তা তিন সপ্তাহ আগেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে নির্দেশনা দিয়েছিল বিটিআরসি। তাতে ভালো সাড়া পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন অপারেটররা। তাই বিটিআরসির এই নির্দেশিকাকে ইতিবাচক হিসেবে হিসেবেই দেখছেন রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ এবং বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর মোবাইল গ্রাহকদের জন্য তিন ও ১৫ দিনের ডেটা প্যাকেজ বন্ধ করে দিয়েছিলো বিটিআরসি। এরপর গত বছরের ২৮ জুলাই বিটিআরসিতে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে মোবাইল অপারেটরদের ১ ও ৩ দিন মেয়াদি ডেটা প্যাকেজ চালু করা হয়। ওইদিন থেকেই ১, ৩, ৭, ৩০ ও আনলিমিটেড — এ পাঁচ মেয়াদে ৪০টি ডেটা প্যাকেজ অফার করতে পারতেন অপারেটররা।