শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন ঠেকাতে না পেরে গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরমধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৩টি কোম্পানি ও গত ২২ জানুয়ারি ২৩টির কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। তার আগে গত ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বাদে অন্যান্য কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
এরপর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন ও বৃটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানি-বিএটিবিসি এর ফ্লোর প্রাইস রোববার (০৩ মার্চ) থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার না করা কোম্পানি হিসেবে থেকে যায় বেক্সিমকো, বিএসআরএম, ইসলামী ব্যাংক, কেপিসিএল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও রবি।
প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক নির্দেশনায় জানিয়েছিল, রেকর্ড ডেটের পর রবি আজিয়াটা, গ্রামীণফোন ও বিএটিবিসি’র শেয়ার ফ্লোরবিহীন অবস্থায় লেনদেন করবে। ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রবি আজিয়াটার শেয়ার গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্লোরবিহীন অবস্থায় লেনদেন করছে।
সোমবার (৪ মার্চ) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) লিমিটেডের শেয়ারের ওপর আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন সীমা) উঠে গেছে। অপরদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার (৪ মার্চ) থেকে কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা অনুযায়ী লেনদেন করেছে। এদিন বিএটিবিসির শেয়ার দর ৩৮ টাকা ৯০ পয়সা কমে ৪৭৯ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়।
এর ফলে রেকর্ড ডেটের পর শুধুমাত্র রবি আজিয়াটার শেয়ার ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের অপেক্ষায় থাকলো।
এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসই ও সিএসইর ওয়েবসাইটে গ্রামীণফোন লিমিটেডের শেয়ারের ওপর আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আর রোববার (৩ মার্চ) থেকে কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা অনুযায়ী লেনদেন শুরু করেছে।
গ্রামীণফোনের মতোই বিএটিবিসির শেয়ার রেকর্ড ডেটের পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনায় জানায় বিএসইসি। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানির ছিল রেকর্ড ডেট। সে হিসেবে সোমবার (৪ মার্চ) থেকে কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে না। ফলে অন্যান্য সাধারণ কোম্পানির মতোই বিএটিবিসির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা অনুযায়ী লেনদেন করেছে।
অপরদিকে আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ হিসাব বছরে মুনাফা বেড়েছে ৭৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এ সময়ে রবি আজিয়াটার শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬১ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩৫ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৭৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৭৬ পয়সায়।
২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটার অনুমোদিত মূলধন ৬ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ৪৬০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া ১ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।