সামিট টাওয়ারের ২০১২টি টাওয়ার অধিগ্রহণ উদযাপন
গত বছরের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের ২০১২টি টাওয়ারের মালিকানা অধিগ্রহণ করে সামিট কমিউনিকেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামিট টাওয়ারস। বর্তমানে বাংলালিংকের ৬ হাজার ৩৪টি টাওয়ার আছে, সেখান থেকে হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে এক তৃতীয়াংশ সামিট টাওয়ারে স্থানান্তর করা হলো। এর ফলে বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় সাইটের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেলো।
সোমবার রাতে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অধিগ্রহণের উৎসব উদযাপন করে সামিট।
বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরের সাফল্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ৭ কোটি মানুষের দেশে ১৩০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্ঠম বৃহত্তম টেলিকম শিল্পের দেশ। এই বিপুল সম্ভাবনার কারণে আরও বেশি ডিজিটাল পরিষেবা, স্মার্ট সমাধান এবং ডিজিটাল পণ্যগুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ইত্যাদির জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সমাধান ও পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
‘বাংলালিংক ও সামিট একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না গিয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতাকেই বাস্তবায়িত করছে। সকলের উচিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে সকলের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করা। দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে এখন দ্রুতগতির ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আছে। সামিট কমিউনিকেশন যে ২ হাজারের বেশি টাওয়ার অধিগ্রহণ করেছে, বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই’- যোগ করেন পলক।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা ব্যবসায়ের পরিবেশ তৈরি করছি। জনসম্পদ সুষ্ঠু ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের অধীন সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করতে চাই। এভাবেই ২০৪১ সাল নাগাদ সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক স্মার্ট সমাজ গড়ে তুলতে এবং সেই যাত্রায় সামিট আমাদের সাথে থাকবে। টাওয়ার শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্মার্ট নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিওন সিইওকে বাংলাদেশে পরবর্তী বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করার আহ্বান জানান জুনাইদ আহমেদ পলক।
ভিওন গ্রুপ সিইও, কান তেরজিওগ্লু , বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, আইসিটি বিভাগ সচিব মোঃ শামসুল আরেফিন ও সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামিট কমিউনিকেশনস গ্রুপ সিইও মোঃ আরিফ আল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সামিট গ্রপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান ও সামিট টেকনো পলিস লিমিটেড পরিচালক ফাদিয়াহ খান।
আজ সামিট টাওয়ার এর মতো বিশ্বমানের স্বাধীন টাওয়ার কোম্পানি পেয়েছি
বাংলালিংক এর মাদার কোম্পানি ভিওন গ্রুপ সিইও, কান তেরজিওগ্লু বলেন, ঢাকায় এসেই আমি বাতাসে বিশেষ একটা গন্ধ পেয়েছি। তবে তা দূষণের নয়। এটা ছিলো পদ্মাসেতু, বিমান বন্দর, উড়াল সড়ক, পরমাণু কেন্দ্র এবং সৌরশক্তির ফার্ম এর মতো ভবিষ্যতমুখী উন্নয়ন যাত্রার। সত্যিই অপূর্ব, প্রত্যয়দ্বীপ্ত ও খুবই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের এক দেশ- বাংলাদেশ। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলালিংককে আঞ্চলিক থেকে জাতীয় নেটওয়ার্কে পরিণত করার। এজন্য আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি দ্বিগুণ করতে যাচ্ছি। এজন্য আমি এরিককে (বাংলালিংক সিইও) যদি তুমি এখানে বিনিয়োগ বাড়াতে চাও তাহলে আমাদের একিট বিশ্বমানের স্বাধীন টাওয়ার কোম্পানি দরকার। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমরা আজ সামিট টাওয়ার এর মতো বিশ্বমানের স্বাধীন একটি টাওয়ার কোম্পানি পেয়েছি। আশা করি এটা আমাদের পরবর্তি বিনিয়োগে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমি ভবিষ্যতে কথা বলছি না। গত চার বছর ধরেই আমরা একসঙ্গে চলছি। আগামীতেও আমরা একসঙ্গে চলবো।
অন্যান্য অপারেটররাও উৎসাহিত হবে
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, নেটওয়ার্কের সেবা মান বাড়াতে ২০১৮ সালে ৪টি কোম্পানিকে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দেয়া হয়। জটিলতা নিরসনে ২০২০ সালে ৩ মার্চ সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট করা হয়। দেশে এখন ৪৪ হাজার ১১৫টি টাওয়ার রয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের ২২ হাজার ১৫৭টি । আর ২১ হাজার ৯৫৮টি অন্যদের। মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিংয়ে চুক্তি অনুযায়ী অন্যান্য অপারেটরদের সঙ্গে ৪৩৩টি টাওয়ার শেয়ার করেছে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ৩৪৫টি সাইট শেয়ারিং করেছে।এখন সামিটের ৪ হাজার ২২৯টি টাওয়ার আছে। অন্যান্য অপারেটররাও এতে উৎসাহিত হবে। এর মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে। টাওয়ার শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্মার্ট নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখবে।
এটা আমাদের গর্বের
অনুষ্ঠানে সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আজিজ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি মানুষ এখন বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগ এর আওতায়। তারা এখন বিদ্যুত গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণেই বাংলাদেশ আলোর গতিতে ছুটে চলছে। বাংলাদেশ ও দেশের দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর নিজের হাতে দুইটি মন্ত্রণালয় রেখেছেন। এর একটি আইসিটি। অন্যটি জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুত। গত ১৫ বছরে এই দুই খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সামিট। সামিট পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ খাতে এবং সামিট কমিউনিকেশন থেকে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য গর্বের।
বাংলালিংক দেশের প্রথম ডিজিটাল ও ডেটা সেবাদাতা
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সামিট কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে আমরা দেশজুড়ে টেলিযোগাযোগের উন্নয়ন দেখছি। এক্ষেত্রে আমরা এই ইকো সিস্টেমের অন্তরালে কাজ করি। অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আয় আসে আমাদের স্থাপিত এ ধরনের অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে। গত ১৪ বছরে সেই অবকাঠামো স্থাপনে আমরা কাজ করেছি। টাওয়ার শেয়ারিং-এ বাংলালিংক এর সঙ্গে আমাদের এই অধিগ্রহণ চুক্তি হয়েছে তাতে অনন্তত ৪টি ইউনিক ফিচার আছে। এই যেমন এটি বেশ দীর্ঘ মেয়াদী একটি চুক্তি এবং এটি পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নবায়ন হবে। বাংলালিংক আগের চেয়েও ভালো সেবা দিতে পারবে। ফাইবার ও টাওয়ার নিয়ে একসাথে কাজ করারও আরো বড় সুযোগ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে বাংলালিংক দেশের প্রথম ডিজিটাল ও ডেটা সেবাদাতা হিসেবে আর্বিভূত হতে যাচ্ছে। ‘
অনুষ্ঠানে বাংলালিংক সিইও এরিক অস, চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগ্যুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।