নতুন দায়িত্বগ্রহণ করার পর সরাসরি দাপ্তরিক কাজের অংশ হিসেবে বুধবার ডাক অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর কার্যক্রম পরিদর্শন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে মতবিনিময় করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় বিটিআরসি বিশ্বে নিয়ন্ত্রণকারী নয়; সমন্বয়কারী হিসেবে অনুরকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একইসঙ্গে ডাক অধিদপ্তরের সরকারি ও নাগরিক সেবা দক্ষতার সঙ্গে নির্বিঘ্নে চলমান রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় নির্দেশনা দিয়ে আগামীতে ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ‘এই পোস্ট অফিস’ আগামী দিনে মানুষের ‘বিরাট শক্তিরর জায়গা’ হয়ে উঠবে।
সকালে আইসিটি বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ শেষে প্রথমে বেলা ১০টার দিকে প্রথমে আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি এবং পরে ডাক অধিদপ্তরে অফিস করেন তিনি। অফিসের শুরুতেই সব কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
উভয় বৈঠকেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী, ইডিজিই প্রকল্পের প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার ড. আব্দুল বারী, এটুআই-এর হেড অব কমার্শিয়াল স্ট্রেটেজি রেজওয়ানুল হক জামি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসি’র বৈঠকের সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকাদরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, প্রকৌঃ শেখ রিয়াজ আহমেদ, ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরীসহ বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বিটিআরসি নতুন একটা উদাহরণ ও ইউনিক মডেল তৈরি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, আশা করা যায় বিটিআরসি পুরো বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় হবে। যেটা শুধু নিয়ন্ত্রণকারী নয় বরং সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করবে এবং স্মার্ট ইকোনমি তৈরিতে লিডিং রোল প্লে করবে।
পলক আরো বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, সবার কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, ইলেকট্রনিক ডিভাইস উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হওয়া এই সম্পূর্ন বিষয়গুলোতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এবং আমাদের আগামী লক্ষ্য ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা থাকবে আমাদের। তাই আমরা চাই।
সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জনাব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং বিটিআরসিকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। আগামীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কাজ করবে বলেও তিনি জানান ।
টেলিযোগাযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে বিভাজন শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বয় জরুরি উল্লেখ করে সভায় অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে লাস্ট মাইল এবং লাস্ট পার্সন কানেক্টিভিটি হবে মূল অবকাঠামো।
বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে টেলিযোগাযোগ খাতের শৃংখলা সমুন্নত রাখা এবং সাধারণ জনগণকে সেবা প্রদানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ও সাইবার নিরাপত্তায় কমিশনের কার্যক্রমসমূহ উপস্থাপনা করা হয় বলে জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। এছাড়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিটিআরসি কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ মাননীয় প্রতিমন্ত্রীকে অবগত করেন তিনি।
বিটিআরসি রেগুলেটর হিসেবে নয় ফেসিলিটেটর হিসেবে কাজ করছে উল্লেখ করে সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বর্তমানে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এখাতে বিনিয়োগ হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০ হাজার মানুষের, বাৎসরিক মোবাইল উৎপাদন ক্যাপাসিটি তিন কোটির ওপরে। এ সময় তিনি বলেন, বিটিআরসি’র অনেক কার্যক্রম তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাই উক্ত বিভাগের সাথে কমিশনের কার্যক্রমের নিবিড় সর্ম্পক ও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে গুরুত্বারোপ করেন।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তরুন কান্তি সিকদারের সভাপতিত্বে ডাক ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পলক জানান মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমি পোস্ট অফিসে টাকা জমাতাম। রাজশাহীতে পড়ার সময় তার তা মানি অর্ডার করতেন। এরপর এমপি হওয়ার পর পার্লামেন্টের পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র খুলেছিলেন। দশ বছরে ম্যাচিউর হয়ে এখন ১৫ বছরে আমার প্রচুর টাকা জমা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আপনাদের দোআয় ওই সঞ্চয়পত্র আমার সবচেয়ে বড় স্ট্রেন্থ। পোস্ট অফিস আমার একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা। আমার কাছে মনে হয় স্টুডেন্ট লাইফ টু ওয়ার্কিং লাইফ, দেন রিটায়ারমেন্ট; সব জায়গাতেই পোস্ট অফিস আমাদের আগামী দিনের নাগরিকদের বিরাট শক্তি হতে পারে।
ডাক বিভাগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আবেগের সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে আমেরিকার ইউএসপোরস্ট যেভাবে অ্যামাজনের মতো ট্রিলিয়ন বিলিয়নের কোম্পানি তৈরি করেছে, সেভাবে বাংলাদেশের ডাক বিভাগকে স্মার্ট করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
করোনায় ডাক বিভাগ লাইফ লানে পরিণত হয়েছিলো মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের ডাক অধিদপ্তরেরের জন্য মাস্টার প্লান থাকতে হবে। এ জন্য আগামী ৩২ দিনের জন্য করণীয় নিয়ে আর্জেন্ট, ৩১ সালের জন্য শর্ট টার্ম, ৩৫ সালের মধ্যে মিডটার্ম এবং ৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট ডাক অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্লান করতে হবে। স্মার্ট ইকোনেমির সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখকে এই ডাক অধিদপ্তর।