নিরাপদ ডিজিটাল বিশ্ব গড়ে তুলতে সব রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরামর্শ দিয়েছেন একটি বৈশ্বিক জোট গঠনের।
রবিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ফেয়ারমাউন্ট হোটেলে শুরু হওয়া তিন দিনের ডিজিটাল কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন (ডিসিও) সম্মেলনের দ্বিতীয় সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ আমাদের সাইবার নিরাপত্তা ক্ষমতায় বিনিয়োগ করেছি এবং সম্প্রতি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সূচকে বিশ্বব্যাপী ৩২ তম অবস্থানে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমরা একা চলতে পারি না। সাইবারস্পেসে হুমকি মোকাবেলায় প্রতিটি দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে। আমরা এরইমধ্যে অনেক দেশ এবং সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব তৈরি করেছি। তাই আমি DCO-এর সকল সদস্য দেশকে অনুরোধ করতে চাই – আসুন আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ ডিজিটাল বিশ্ব নিশ্চিত করতে একটি বৈশ্বিক জোট গঠনের জন্য কাজ করি।
“ডিজিটাল কো-অপারেশন অর্গানাইজেনের সেক্রেটারি জেনারেল মিসেস দীমা আল ইয়াহিয়া সঞ্চালনায় গালফ কোআপারেশন কাউন্সিলসহ জাতিসংঘের ডিজিটাল সমন্বয়ক সংস্থা ডোকো’র ১৩টি সদস্য রাষ্ট্রো মন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিরা এই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় ডিজিটাল রূপান্তরে টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা। পথ চলার দুই বছরে এবারই প্রথম এই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রীরা একে অপরের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে বৈঠকের সুযোগ পাচ্ছেন।
সম্মেলনে যোগ দিয়ে আগামী বছরের তৃতীয় অধিবেশন বাংলাদেশে করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জন করেছে। এখন আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করেছি। স্মার্ট শহর এবং স্মার্ট দেশ হিসাবে এখন আর জীবনের বিকল্প নয় বরং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু এখানে প্রযুক্তিগত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অনুপস্থিতি রয়েছে; যা সমমনা দেশগুলিকে একে অপরের বন্ধনকে দৃঢ় হতে দেয়নি। তাই বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ উদ্ভাবনী রূপান্তরমূলক সমাধানের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা বিকাশে একসাথে কাজ করতে আগ্রহী। কারণ বাংলাদেশ সবসময় সৌদি আরবের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আস্থা রাখে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই), রোবোটিক্স, মাইক্রো প্রসেসর ডিজাইনিং অ্যান্ড মেনুফ্যাকচারিং, এবং সাইবার নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাগরিকদের গোপনীয়তা ও ডেটা সুরক্ষিত রাখতে ডেটা সুরক্ষা আইন চালু করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট, কানেক্টিভিটি এবং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন এ চারটি প্রধান স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছেন। বিগত ১৪ বছরে আইসিটি খাতের উন্নয়নের ফলে আইটি/আইটিইএস খাতে ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আইসিটি খাতে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হচ্ছে। বাংলাদেশে ৫২ হাজার সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে।
দেশে সাড়ে ৬ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন বাংলাদেশ অনলাইন ওয়ার্ক ফোর্সে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। প্রযুক্তিতে দেশের মেধাবী তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনকিউবেশন সেন্টারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রযুক্তিবান্ধব বিভিন্ন নীতিকৌশলের ফলে দেশ শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরি করতে সরকারিভাবে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৩৯২ জনকে স্টার্টআপ ইকুইটি ফান্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন ইতোমধ্যে আমরা সফলভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ শুরু করেছি।
এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ও Saudi Company for Artificial Intelligence- SCAI প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আয়মান আল রাশেদ এবং চিফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পার্টনারশীপ অফিসার মি. আব্দুল্লাহ আলজাওয়ানির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিকাশে উভয় দেশ কিভাবে কাজ করা যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সৌদি আরবের এসসিএআই ও বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সৌদি আরবের এসসিএআইর কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিকাশে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশ যৌথভাবে কিভাবে এ বিষয়ে কাজ করবে তার একটি পদ্ধতি ঠিক করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
পরে প্রতিমন্ত্রী এসসিএআই এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের আইটি সেক্টরের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সকালে সৌদি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির (এসটিসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কে. আল ফয়সালের বৈঠক করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। এছাড়াও সকলে ডিজিটাল কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল মিসেস দীমা আল ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণে রিয়াদ ফ্রন্ট এক্সপো এক্সিবিশন সেন্টার পরিদর্শন করেন।
Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.