চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে অন্যান্যের সঙ্গে তার সঙ্গে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ধারণা করা হচ্ছে, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও রেলের সঙ্গে এবার ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তি বিষয়েও বাংলাদেশের যৌথ পথচলায় নতুন মাত্রা যোগ হবে।
সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এসময়ও সফরসঙ্গীদের মধ্যভাগে ছিলেন পলক।
অবশ্য এই সফরে দৃশ্যমান কোনো চুক্তি না হলেও প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ভারত সফরে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বার্থে গুরুত্বের সঙ্গে টেবিলে থাকবে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে সংশ্লিষ্ট ৭টি বিষয়। এর মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ের পাশাপাশি দুই দেশের ডিজিটাল সংস্কৃতিতে যোগ হতে পারে নতুন মাত্রা।
কেননা, এর আগে গত ২৭ এপ্রিলে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ক্যাম্পাস এবং ল্যাব পরিদর্শন করেছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। তখন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আইআইটির সাথে যৌথভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকেপারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে ৭টি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। বৈঠকে আইটি সেক্টরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, সাইবার-সিকিউরিটি, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ভিএলএসআই ইত্যাদি বিষয়ে ইকো-সিস্টেম তৈরি করে দুই দেশ একসঙ্গে কিভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।
এরই অংশ হিসেবে রাইসিনা ডায়ালগে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশ এবং নিচ্ছিদ্র সাইবার সুরক্ষায় উভয় দেশ প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা বিনিময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি সুপরিসর ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে সম্পাদিত চুক্তি সম্প্রসারণ করেছিলেন পলক। সেসময় বিজিডি ই-গভ সার্টের চারজন এবং সার্ট ইন্ডিয়ার তিন জনের সমন্বয়ে মোট সাত সদস্যের একটি ‘যৌথ কমিটি’ গঠন করার পরিকল্পনাও করা হয়েছিলো। এছাড়াও বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে এড্যু-ট্রেইনমেন্ট প্রকল্পে বিনিয়োগ করে দিল্লী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে ওই প্রকল্পের অধীনে ৬৪ জেলায় কমপ্লেক্স স্থাপনে ভারত ৫০ কোটি টাকা গ্ৰ্যান্ট দিয়েছিলো বাংলাদেশকে। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫০ কোটি টাক। এই কাজ এখন চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী নতুন উচ্চতায় পৌঁছেবে।
সে লক্ষ্যেই গত ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং আইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দক্ষতা উন্নয়ন, যৌথ ডিগ্রি এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে একটি সমঝোতা চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। আইআইটি মাদ্রাজের সাথেও এ ধরনের একটি চুক্তি শেষ ধাপে পৌছেছে যার ফলে মাদ্রাজ আইআইটির একটি ক্যাম্পাস বাংলাদেশেই হবে।
এর বাইরেও যৌথ উদ্যোগে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও টেকসই ইকো সিন্টেম তৈরিতে গত ১ সেপ্টেম্বর স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার সঙ্গে স্টার্টআপ বাংলাদেশ ; পিকেআই ব্যবহার করে ডিজিটাল সিগনেচার ব্যবহার করতে ৩০ আগস্ট সিসিএ বাংলাদেশ ও সিসিএ ইন্ডিয়া মধ্যে সমঝোতা ও ১৯ আগস্ট ই-গভর্নেন্সে ভারতের ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স বিভাগের যৌথ অংশীদারিত্বের বিষয়ক খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রাঞ্জেকশন ‘বিনিময়’ উন্নয়নে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিতের বিষয়ক একটি খসড়া গত ২৫ আগস্ট চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়াও ১৯ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইআরডি ও হাইটেক পার্ক কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিইডিইসি সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিটি সরঞ্জাম সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অবকাঠামো ব্যবহার করে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় Establishment of Bangladesh Bharot Digital Edutrainment Center (BDEC)। এটি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং বিনোদনের জন্য একটি অনন্য প্রকল্প হবে। এটি একটি একক পয়েন্ট কেন্দ্র হিসাবে কাজ করতে পারে।
এডুটেইনমেন্ট শব্দটি এসেছে “শিক্ষা” এবং “বিনোদন” শব্দের সংমিশ্রণ থেকে। তাই শিক্ষাকেন্দ্র হল সেই কেন্দ্র যেখানে অবসরের মাধ্যমে শেখার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই Edutrainment কেন্দ্রগুলি একই সাথে নতুন জিনিস শেখার এবং মজা করার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ নতুন উপায় প্রদান করে।
সব মিলিয়ে প্রযুক্তি দক্ষতা ও অভিজ্ঞা বিনিময়, সাইবার সুরক্ষা ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশ-ভারত একসাথে এগিয়ে যাওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছে বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ।