এখন থেকে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেককেই ন্যুনতম প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। চিকিৎসককে টেলিমেডিসিন বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। আইনজীবিকে ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনার মতো ন্যুনতম প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এমনকি রাজনৈতিক কর্মীকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভালোভাবে পরিচালনার জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়াও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও ন্যুনতম প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যেই সরকার প্রযুক্তি জ্ঞান ও প্রশিক্ষণে গত ১৩ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ২০১২ সালে কক্সবাজারে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ সৃষ্টি করেছিলো। আগামীতে কেউ যেন এর পুনরাবৃত্তি করতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
শনিবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কক্সবাজার‘হাই-টেক পার্ক’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন পরবর্তী উদ্বোধনী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।
তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য পলক বলেন, প্রযুক্তিকে আপনারা আত্মকর্মসংস্থানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন। নিজের পরিবার ও দেশের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ব্যবহার করবেন। কিন্তু কোনো ধরনের দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের শিকার হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবেন না। বর্তমান সাইবার যুদ্ধে দেশবিরোধীদের পরাজিত করে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তৈরি হোন।
২০১৬ সালে স্টার্টআপ বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া নির্দেশনাটি সবার জীবনে প্রতিপালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জয় ভাই বলেছিলেন, একজন ক্ষুধার্তকে একবেলা খাবারের জন্য মাছ দিয়ে সহায়তা না করে তাকে জীবনভর মাছ খাওয়ার জন্য মাছ ধরা শেখান। এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করেই আইসিটি বিভাগ দেশজুড়ে আইটি ও হাইটেক পার্ক তৈরি করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
নির্মিয়মান হাইটেক পার্ক এর মাধ্যমে কক্সবাজার ‘পর্যটন-প্রযুক্তি নগরী’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এমন প্রত্যাশা করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কক্সবাজারে যে একটি হাইটেক পার্ক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হতে পারে অতীতে এমন কোনো রাজনীতিক বা প্রধানমন্ত্রী ভাবেনওনি, উদ্যোগও গ্রহণ করেননি। কিন্তু আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। উনি বাংলাদেশের প্রথম ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে কক্সবাজারকে প্রথম পর্যায়ে বেছে নিয়েছেন। এই পার্ক হবে কক্সবাজারের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ঠিকানা। প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ নিয়ে এখান থেকেই তরুণ-তরুণীরা আইটি ফ্রিল্যান্সার, বিপিও এবং ই-কমার্সে যুক্ত হতে পারবে। এভাবেই কক্সবাজারকে আধুনিক ও স্মার্ট পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পর এখন আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চাই; আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণ করতে চাই, যেটা হবে সোনার বাংলার প্রতিরূপ।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কক্সবাজারে হাইটেক পার্ক নির্মাণ চলাকালীন সময়ে আমরা এখানে আরেকটি জায়গা খুঁজছি। ন্যুনতম ২ একর জায়গা পেলেই ১০০-১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে আমরা আরেকটি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করবো। এই সকল কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে কক্সবাজার পর্যটন নগরীর পাশাপাশি প্রযুক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজার-০৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল কক্সবাজারে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ শিক্ষায় অত্যন্ত অনগ্রসর। এই অঞ্চলের তরুণ-তরুণীদের আইটিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা গেলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে এই এলাকার সন্তান হিসেবে আমি এবং আমার জনগণ পাশে আছে।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের ২৪ জন ফ্রি-ল্যান্সার এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ এর কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে মেড ইন বাংলাদেশ ল্যাপটপ (ওয়ালটন) হস্তান্তর করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে বর্তমানে সারা দেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে, ইতোমধ্যে ৯টি পার্ক স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে যেখানে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে হয়তো জেলাপ্রশাসকের কাজও রোবট করবে। তাই প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান ছাড়া আমাদের কেউই ভবিষ্যত কর্মজগতে টিকে থাকতে পারবে না।
পুরিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, প্রযুক্তি কল্যাণে এখন সরকারের সকল কর্মকর্তা জবাবদিহিতার আওতায় চলে এসেছেন। কাজে স্বচ্ছতা এসেছে।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রকল্প পরিচালক এ, কে, এ, এম, ফজলুল হক সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অপরদিকে অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে এবং শেষ পর্যায়ে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহারে শিক্ত হন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।