ডিজিটাল বাংলাদেশের তরুণরা আর চাকরির পিছনে না ঘুরে আইটি প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আর এই আশাবাদ বাস্তবে রূপ দিতে দেশ জুড়ে আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে রবিবার (২৯ মে) মানিকগঞ্জের ঘিওরে মানিকগঞ্জ “শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
জেলার ঘিওর ডিএন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ মানিকগঞ্জবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এক অনন্য উপহার। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে খুব দ্রুত এ আইটি ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং দুই বছরের মধ্যে এখানে আমরা কার্যক্রম শুরু করব। এখান থেকে প্রতি বছর এক হাজার তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। এ তরুণ-তরুণীরা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ডলার আয় করবে। নিজেরা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।’
শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার মানিকগঞ্জের তরুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের ঠিকানা উল্লেখ করে পলক আরো বলেন, এই পার্ক বাংলাদেশকে শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞান- নির্ভর, উন্নত অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। গড়ে উঠবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা করার উপযোগী প্রজন্ম। আগামীতে আমাদের মেধাবী তরুণরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি রোবটিক্স, আইওটি, সাইবার সিকিউরিটি টুলস তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা শহর যেকোনো জায়গায় বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।
পলক আরো বলেন দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্রেন চাইল্ড শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, স্কুল অব ফিউচার, ডিজিটাল এডুটেইনমেন্ট সেন্টারসহ দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের তরুণরা আর জব সিকার নয়, জব ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে। ডলার আয়ের জন্য এখন আর বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজন নাই। এটাই শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, কাজেই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান বা অন্য কোনো ব্যর্থ রাষ্ট্রের সাথে তুলনার সুযোগ নেই- যোগ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
মানিকগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ, ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোঃ রফিকুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন, জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ জেলা পুলিশ সুপার মো গোলাম আজাদ খান, ঘিওর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৬৪টি জেলায় আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জে আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। মানিকগঞ্জ ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় আরও ১০টি জেলা- নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, জয়পুরহাট, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বান্দরবান, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, দিনাজপুর ও মেহেরপুরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১১টি জেলায় প্রায় ৭৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী ঘিওরে মানিকগঞ্জ শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রসঙ্গত,, ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ তলা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এটি চালু হলে মানিকগঞ্জের ১০০০ হাজার তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে।