মানুষের মত প্রকাশের দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছে প্রযুক্তি। কিন্তু বিগ টেক, রেডটেক ও ডিপ টেক কোনো কোনো ক্ষেত্রে অযাচিত নাক গলাচ্ছে রাজনীতিতে। সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এসব মোকাবেলায় বাধ্য হয়েই কোনো কোনো রাষ্ট্রকে খড়গহস্ত হতে হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর আচরণে রাজনীতি এখন ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায়। বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্য।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এই প্রতিবন্ধকতাটি কীভাবে মোকাবেলা করছে তা তুলে ধরে জাতিসংঘের অধীনে একটি গ্লোবাল ইন্টারনেট গভর্নেন্স কাউন্সিল গঠন এবং গ্লোবাল ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তি নির্দেশিকা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) ভারতের নয়াদিল্লির তাজ প্যালেসের দরবার হলে রাইসিনা সংলাপ ২০২২ উপলক্ষে “Diminished Democracies: Big Tech, Red Tech, and Deep Tech” শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে এই আহ্বান জানান তিনি।
পলক বলেন, বিগটেক কোম্পানিগুলো আজকে অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে। জনমত ও মূল্যবোধ নিয়ন্ত্রণে এআই, মেশিন লার্নিং ও বিগ ডোটা ব্যবহার করছে। তাই আমজনতার সুরক্ষায় ডিজিটাল স্বাক্ষরতায় গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে তারা যেন ফেক নিউজ এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় সচেতন থাকেন। একই কারণে আমারা দেশের সাইবার স্পেস সুরক্ষায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্স প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখান থেকে শিশু, শিক্ষার্থীসহ সব নাগরিকের ডিজিটাল স্বক্ষরতা জ্ঞান বিতরণ করা হচ্ছে। আত্মসুরক্ষার পাশাপাশি অন্য কোনো দেশে যেনো সাইবার আক্রমণ করা না হয় সে বিষয়েও আমরা সতর্ক রায়েছি। এজন্য এরইমধ্যে একটি ডেটা প্রটেকশন আইন প্রণয়ন এবং জিডিপিআর আদলে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছি।
এসময় ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে নিজেদের জন্য একটি আঞ্চলিক সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম তৈরি এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও যেন জেনারেল ডেটা প্রটেকশন আইন করা হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি আরো বলেন, আমি আশা করবো ডেটা সুরক্ষায় জাতিসংঘ এগিয়ে আসবে। ডেটা প্রাইভেসি এবং প্রোটেকশনের জন্য ডেটা প্রোটেকশন কাউন্সিল গঠন করবে। আমরা বিষয়টিকে সাদরে গ্রহণের জন্য উদগ্রীব আছি।
পলক বলেন, বিগ টেক, রেডটেক ব্যবহার করে অনেকেই আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ অবস্থা থেকে নাগরিকদের সুরক্ষায় আমাদেরকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এটা মোকাবেলা করতে পারবো। এটা প্রতিযোগিতার সময় নয়; সময়টা একে অপরের সঙ্গে অংশীদারিত্বের। যদি আমরা আঞ্চলিক জোট গঠন করে কাজ করতে পারি তাহলে নাগরিকদের অধিকারের পাশাপাশি সাইবার স্পেস ও অর্থনীতিকে সুরক্ষা করতে সক্ষম হবো।
অগ্রসরমান এসব প্রযুক্তি বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নাগরিকদের সুবিধায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করি। কিন্তু এই বিগটেক, রেডটেক যদি আমাদের স্থানীয় রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অনধিকার খবরদারি করতে যায় তাহলে আমরা তা মেনে নেবো না। এ কারণে আমারা আমাদের সাইবার স্পেস ও ডিজিটাল নেটিজেনদের সুরক্ষায় ৪টি নীতি গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে- পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা; নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে না পারলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক পর্যায়ে যুৎসই আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তের সঞ্চলনায় প্যানেল আলোচনায় অন্যান্যোর মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ভারতের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার এবং ইমার্জিং টেকনোলজির ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অ্যান নিউ বার্গার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল অটোমিকস গ্লোবাল করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ভিভেক লাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামের প্রতিনিধি ইভন নানজিরা সাম্বুলি।
আলোচনা শেষে প্রশ্নত্তোর পর্বে ইন্টারনেটের রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন রাইসিনা ইয়াং ফেলোরা।