আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে থ্রি হুইলার ইভি (বিদ্যুত চালিত তিন চাকার গাড়ি) বাজারে আনতে যাচ্ছে মোটরসাইকেল শিল্পে দেশের প্রথম মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রানার। এর পরে এই ইঞ্জিন চালিত গাড়ির বদলে আসবে বিদ্যুত চালিত থ্রি হুইলার। তখন আর বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে সিএনজি আমদানি করতে হবে না। এরপর ধাপে ধাপে আসবে সাশ্রয়ী মূল্যের টেকসেই বিদ্যুত চালিত দুই চাকা ও চার চাকার গাড়ি। এভাবেই রানার বাংলাদেশের টেসলা হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আর এ জন্য রানারকে গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা করবে আইসিটি বিভাগের এটুআই এর আই ল্যাব। সরকারের নীতিগ সহায়তাতেই রানার দেশে তৈরি মোটর গাড়ি রপ্তানিও করবে বলে আশাবাদী প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে এভাবেই ২০৪১ সাল নাগাদ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সম্ভাবনাময়ী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে- যোগ করেন পলক।
তিনি আরো বলেন, দেশে তৈরি ইলেকট্রিক গাড়িগুলো যেনো সহজেই নিবন্ধন পায় সেজন্য তিনি শিগগিরি বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেবো। আমরা এখন ইলেকট্রিক ভেহিকেল বাতিল করতে পারবো না। এটা আমাদের ইকোনোমির পার্ট হয়ে গেছে। কিন্তু সস্তা, গুনগত মান খারাপ গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি না করে দেশেই সাশ্রয়ী ও গুণগত মানের ইলেকট্রিক ভেহিকেল নিবন্ধন দিলে এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং যোযোগ খাত শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে।
বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রানার অটোমোবাইল কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
বিগত ১৩ বছরে দেশে ‘ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ’ সৃষ্টি হওয়ায় এখন রানারের মতো প্রতিষ্ঠান মাত্র ২ জন বেদেশী ছাড়া ১৯৯৮ জন দেশের তরুণ প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা নিয়ে পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
এসময় তার পাশেই বসে ছিলেন রানার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান এবং টেলিকম ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য মুনিরা সুলতানা ও এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী।
সূত্রমতে, ২০২০ সালকে প্রধানমন্ত্রী ইঞ্জনিয়ারিং বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিলে ওই বছরই সকল অটোমোবাইল এসোসযি়শেন এবং ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের নিয়ে বিডার তত্ত্বাবধায়নে এটুআই ইনোভেশন ল্যাব এর সার্বিক সহযোগিতায় একটি মতবিনিময় সভার উদ্যেগ নেয়া হয়; যখোনে সকলে মিলে বাংলাদশে লাইট ইঙ্গিনিয়ারিং খাতকে আরো দৃঢ় ভাবে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এর পরের বছর ১৯ এপ্রিল তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদে পলক, এমপি, এটুআই পলিসি এডভাইজার, প্রকল্প পরিচালক এটুআই, হেড অফ টেকনোলজি এটুআই সহ আইসিটির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদশেরে প্রথম গ্রামীণ জনপদরে জন্য উপযোগী একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে রানার ও এটুআই ইনোভেশন ল্যাবের কর্মকর্তাগণ গত এক বছর বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষণা ও উন্নয়নের রুরাল ইলেট্রিক ভেহিকল (ইভি) তৈরির প্রস্তুতির উদ্যেগ নেয়া হয়। র্দীঘ এক বছর পর সেই পরকিল্পনা মাফিক বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রথম ভার্সন কারখানায় গিয়ে তা দেখে সাংবাদিকদের সামনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন পলক।
এই মুগ্ধতা নিয়ে তিনি প্রত্যাশা করেন হয়তো আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষক, মৎসজীবিরাও নিজেদের দেশের তৈরি ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচল করবেন।
প্রসঙ্গত, চীনের ডায়াং মোটরসাইকেল বিপণনের মাধ্যমে ২০০০ সালে রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেড যাত্রা শুরু করে রানার গ্রুপ। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্থাপন করা হয় মোটরবাইকের কম্পোনেন্টস তৈরির কারখানা। আর ২০১১ সালে রানার ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, এসেম্বলিং, টেস্টিং, চেসিস, রিয়ার ফোরক, ফুয়েল ট্যাঙ্ক, মেইন স্ট্যান্ড, সাইড স্ট্যান্ড, ফুট পিগ এবং ইঞ্জিন তৈরির মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১২ সালে পুরোদমে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে রানার গ্রুপ। আর ২০১৭ সালে নেপালে রপ্তানির মধ্য দিয়ে শুরু হয় রানারের দক্ষিণ এশিয়া সফর।