উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন , “বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব উপায়ে ও স্বল্প খরচে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী জ্ঞান ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতি ও সেবা সৃষ্টি করতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে আমরা আমাদের সেবা ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।”
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চলমান পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এই প্রস্তাব দেন তিনি।
সভার দ্বিতীয় দিন ‘বহুমাত্রিক ঝুঁকি মোকাবেলা এবং উন্নয়নের টেকসই লক্ষ্য অর্জনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তির ব্যবহার’ নিয়ে প্রাধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি গত এক যুগে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এর অবদান তুলে ধরেন।
বর্তমান সাফল্যের পেছনে সরকারের ব্যাপক অর্থায়নের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র বলেন, “সরকার তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণে বিগত কয়েক বছরে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক কেবল সারাদেশে স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৯০ ভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে; আমরা ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “দেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক কোভিড শনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং সরাসরি কোভিড তথ্য-সহায়তা চালু করার ফলে সবচেয়ে কম সংক্রমণ হারের দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে।”
তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা জানান, গত ১২ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার শুন্য দশমিক তিন শতাংশ থেকে বেড়ে দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, এসব সেন্টার পরিচালনায় নারীসহ ব্যাপক উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যাপক তথ্য-ব্যাংক সৃষ্টি, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা পরিশোধ, ই-সরকার, ই-নথি, ই-জুডিশিয়ারি, টেলি ও অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা, সরকারি দপ্তরের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা, জাতীয় হটলাইন স্থাপনসহ বাংলাদেশে নাগরিক জীবনধারার প্রতিটি স্তরে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে।
জয় আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব স্কুলেই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সরকার দুই ২০ লাখের বেশি নাগরিককে বিভিন্ন আইটি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটালি পশ্চাদপদ একটি দেশ থেকে বাংলাদেশকে ক্ষমতাসীন সরকার একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে”।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিন ঝাউ।
প্যানেল আলোচনায় জাতিসংঘ সংস্থা ও নাগরিক সমাজের সদস্য এবং শিক্ষাবিদরা অংশ নেন। এছাড়া সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও বক্তব্য দেন।
সভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের সামগ্রিক অর্জন ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানান।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল এ সভার বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহি মিনা।
জাতিসংঘ পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভা শুরু হয়েছে গত ২৪ মে। শেষ হবে ২৮ মে। সভাটি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রে।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম এলডিসি সম্মেলন।