দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতে আরপিএ ব্যবহারে অ্যাকাউন্টিং পেশাদারদের স্বাগত জানিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরামর্শ দিয়েছেন তাদের পেশাজীবনের দক্ষতাকে একে অন্যের মধ্যে বিনিময় এবং পরিবর্তিত প্রযুক্তিতে নিজেদের জ্ঞানকে ঝালিয়ে নিতে।
বৃহস্পতিবার,ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘ট্রান্সফর্মিং ফাইনান্স এন্ড একাউন্টিং উইথ রোবটিক প্রসেস অটোমেশন’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, অ্যাকাউন্টিং পেশাদারদের প্রযুক্তির এই বিবর্তিত জগৎ সম্পর্কে জানাটা আরো গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত পরিবর্তিত পরিবেশে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করার জন্য আপনাদের পেশাদার দক্ষতাগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার এবং শেখার সময় এসেছে।
কোভিড মহামারীকালীন ব্যবসায়ের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ) অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিশ্ব এখন দ্রুত রোবটিক প্রোসেস অটোমেশন ছাপিয়ে ইন্টেলিজেন্ট হাইপার অটোমেশনে চলে গেছে। এর মূল স্তম্ভগুলি হল রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ), প্রসেস মাইনিং এবং অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (ওসিআর)। আর প্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছে এই হাইপার অটোমেশন।
পলক আরো বলেন, বিশ্ব ক্রমবর্ধমান ডেটা এবং প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। প্রযুক্তিটি যে দ্রুত গতিতে বিকাশ লাভ করছে, সেখান থেকে ফিনান্স এবং অ্যাকাউন্টিং পেশাদারদের উপস্থাপিত সুযোগগুলি পুঁজি করার উপায় আবিষ্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, এটি ব্যবসায়ের কার্যক্রম এবং প্রবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সুসংহত করবে । তিনি আরও বলেন, রোবোটিক প্রসেস অটোমেশনটি স্মার্ট সফটওয়্যার রোবট (বটস) মানবিক মিথস্ক্রিয়াগুলিকে কপিক্যাট করে এবং ওয়েব এবং অন্যান্য ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশনগুলির সাথে প্রক্রিয়াগুলির কার্য সম্পাদন করে, ব্যবসায়িক কার্যকলাপকে আরো দ্রুতগতি করে তুলবে। তিনি বলেন কোভিড মহামারির সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্য সম্পাদনে আমাদের ডিজিটাল নির্ভর অর্ন্তভূক্তি আরো বেশি করে তুলবে । সেই ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ার লক্ষে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
ইউআইপাথ (UiPath) থেকে সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসাবে অংশ নেন ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিজনেস এর ভাইস প্রেসিডেন্ট – আনষুমান রাই, ইপিএস গ্লোবাল সার্ভিসেস এর ভাইস প্রেসিডেন্ট – ক্রিশ্চিয়ান এসমাইজার এবং ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং-ইন্ডাস্ট্রি প্র্যাকটিস লীডার – অরুনপ্রসাদ রাম ।
সম্মেলনে প্যানেলিস্ট হিসাবে অংশ নেন ডেনসু এজিস নেটওয়ার্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিনান্স – সি.এ. জনার্দন হেব্বার, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ এর পরিচালক ও সিএফও – সাজ্জাদ চৌধুরী এফসিএ এবং রোবোটুমেশনের হেড অব অপারেশন – ফায়সাল মোহাম্মদ।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবির প্রেসিডেন্ট – মাহমুদ-উল হাসান খসরু এফসিএ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালণ করেন আইসিএবি সাবেক প্রেসিডেন্ট ও গ্রান্ট থর্টন কনসাল্টিং বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর – দেওয়ান নুরুল ইসলাম এফসিএ।
ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক কাজে প্রযুক্তির ভূমিকা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান রেগুলেটরি নিয়মকানুনের পরিবর্তন ও কমপ্লায়েন্স ফাংশন এর কারণে কর্মীদের কাজের গতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে, তাই কমপ্লায়েন্স ফাংশন পরিচালনা করতে প্রতিষ্ঠানগুলো রোবোটিক প্রসেস অটোমেশনকে গ্রহণ করছে।
তাদের ভাষ্য, সারা বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মহামারিতে আয়ব্যায়ের হিসাব মেলাতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে, দূরদর্শী প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কার্যক্রম ডিজিটাল-এ রূপান্তর করার জন্য অত্যাধুনিক রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন বা আরপিএ প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাড়ীতে বসেই সম্পৃক্ত থাকছেন সব অফিসিয়াল কার্যক্রমের সাথে, সফটওয়্যার রোবটকে দিয়ে দ্রুতগতিতে করিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বাংলাদেশের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বাজারে রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কোভিডকালীন অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার প্রভাবকে মোকাবিলা করতে ব্যবসায়ের বৃদ্ধি সক্ষম করতে বাংলাদেশের এই “বুদ্ধিমান অটোমেশন” প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা আবশ্যক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ) এমন এক প্রযুক্তি যেখানে সফটওয়্যার “রোবট” কে একবার শেখানো হলে তা মানুষের বিভিন্ন কাজ অবিকল অনুকরণ করে যেতে পারে।
আরপিএ রোবটগুলি মানুষের নিয়মে বাধা বিভিন্ন কাজকে অনুকরণ করতে সক্ষম। তারা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে লগ ইন করা,ফাইল এবং ফোল্ডার ট্রান্সফার করা,তথ্য অনুলিপি তৈরি করা,ফর্ম পূরণ করা,নথি থেকে তথ্য উদ্ধার করাসহ ইত্যাদি সহজেই করতে পারে।
রফতানি,জিডিপি,ইলেক্ট্রনিক অর্থ আদান-প্রদান গত কয়েক দশকে বহুগুণে বেড়েছে এবং আমরা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে ব্যবসায়ের হাইপারগ্রোথ বজায় রাখার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য অটোমেশন, আরপিএ,প্রসেস মাইনিংয়ের মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক বলে তারা মনে করেন ।
আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ-উল হাসান খসরু এফসিএ বলেন, হাইপারটেমোশন,আরপিএ,প্রসেস মাইনিং, ওসিআর বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে সুবর্ণ সুযোগ দেবে কারণ এই নতুন প্রযুক্তিগুলি ক্ষুদ্রতর সুক্ষতর কাজ সম্পাদন ও বুদ্ধি বিকাশের অপার সম্ভাবনা তৈরি করছে। তাই শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়,ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাঠ্যক্রমে অটোমেশন সম্পর্কিত কোর্সগুলি সংযুক্ত করা হয়েছে কারণ শিক্ষার্থীদের নেক্সট জেন টেকনোলজির জন্য প্রস্তুত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে , তিনি মন্তব্য করেন।
গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ এর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক বলেন বিশ্ব রোবোটিক প্রক্রিয়া অটোমেশন বাজারের আকার ২০২২ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে , ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৩.৬% এর সিএজিআর-এ প্রসারিত হবে। আরপিএ ব্যবহারকারী সংস্থাগুলি সুনির্দিষ্ট অনেক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে সক্ষম হবে এবং তাদের ভোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে এবং গ্রাহক বাড়াতে সক্ষম হবে ।
তারা আরো বলেন যে, প্রযুক্তি বিবর্তনের একটি আকর্ষণীয় পর্যায়ে আমরা প্রবেশ করছি যা বিশ্বকে বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত সঠিক সময়ে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের বিষয়টি গ্রহণ করা এবং পরবর্তী স্তরে তাদের প্রচারের জন্য সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতিতে প্রযুক্তির সুবিধাগুলি অর্জন করা ।