গত এক যুগের অর্জনকে পূর্ণতা দিতে স্বাধীনতার পূর্ণ জয়ন্তীতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স (৪আইআর), এজেন্সি টু ইনোভেশন (এটুআই), সাইবার সিকিউটি হেল্প ডেস্ক (১০৪), ওপেন ডেটা এনালিটিক্স প্লাটফর্ম (জনতার সরকার) ও ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরিসহ আরো ১২টি উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের আইসিটি ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ।
শনিবার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক উপস্থানায় এ তথ্য তুলে ধরেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আলোকে ২০৪১ সালের মধ্যে তিন ধাপে একটি উন্নত, আধুনিক ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে উপস্থানায় তথ্যপ্রযুক্তি এখন অক্সিজেনের মতো প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, উদ্ভাবন, প্রাকৃতিক সম্পদ, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারের নেয়া উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নিয়াজ মোহাম্মাদ জিয়াউল আলম। এলআইসিটি প্রকল্পের পলিসি এডভাইজার সামি আহমেদ এর সঙ্গে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আইল্যাবে তৈরি রোবট মাইশা।
এসময় আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম আরশাদ হোসেন, বিসিসি নির্বাহী পরিচালক পার্থ প্রতিম দেব, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি মহাপরিচালক মোঃ রেজাউল করিম, এটুআই প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বিগত ১২বছরে দেশে একটি শক্তিশালী আইসিটি ব্যাকবোন তৈরি হয়েছে, যা গ্রাম এলাকা পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। দেশের ৩ হাজার ৮শ’ ইউনিয়ন এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায়। ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য ইন্টারনেট নিশ্চিত করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আইসিটি ব্যাকবোন তৈরি হওবার কারণে করোনা মহামারিকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অফিস-আদালত, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও ব্যবসা-বানিজ্যের কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। সরকার করোনা পোর্টাল, কোভিড ট্রেসার, কোভিড ১৯ ট্রাকার, ফুড ফর ন্যাশন, হেলথ ফর ন্যাশনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফরম ব্যবহার করে করোনা মোকাবেলা করছে।
২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ২ হাজার সরকারি সেবাকে ডিজিটালাইজড করার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৯৬৪টি সেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে এবং আরও ১ হাজার ৮৬টি সেবা রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান পলক।
তিনি বলেন, সরকার অফিসের কার্যক্রমে কাগজ ও কালমের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ই-অফিস কার্যক্রম চালু করেছে। এই অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সরকারি অফিসে কাজের গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনয়নে ই-নথি চালু করা হয়। বর্তমানে ৮ হাজারেরও বেশি অফিসের প্রায় ৯০ হাজারেরও অধিক কর্মকর্তা ই-নথি ব্যবহার করছে। অদ্যবধি, ১ কোটি ৪৩ লাখ ফাইল ই-নথি সিস্টেমের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৬ হাজার ৭শ’৯০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৫৪ কোটি ৮৫ লাখ মানুষকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। দেশে ৩৯টি হাইটেক/আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টির র্নিমাণ শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম টায়ার-৪ ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটাই এখন ডিজিটাল সংযুক্তির ব্রেইন হিসেবে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, সৌদি আরবে ১৫টিসহ মোট ৭ হাজার ৭২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হয়েছে। আরও ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শিক্ষা ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
পলক বলেন, বিগত বার বছরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ মানুষকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা হয়েছে। এ বছর শেষে আইসিটি খাতে কমর্সংস্থানের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ লক্ষ। চর্তুথ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার দক্ষ মানুষ তৈরির ওপর জোর দিয়েছে। ইতোমধ্যে চর্তুথ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্লকচেইন, রোবোটিকস, এআই, এআর, ভিআর, ক্লাউড কম্পিউটিং, থ্রিডি প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে। গড়ে তোলা হচ্ছে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি গড়ে তোলা হচ্ছে। র্স্টাটআপ ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য ৪৪টি র্স্টাটআপ প্রতিষ্ঠানের ১১৮ জন স্টার্টআপ প্রতিনিধিকে কো-ওর্য়ািকং স্পেস বরাদ্দ এবং ১৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তেরি করা হয়েছে।