স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক পেপারলেস অফিস বাস্তবায়নে ই-সাইন পরিষেবা চালু করেছে বাংলাদেশে কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এই ডিজিটাল স্বাক্ষর প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট অর্থনীতিকে ভূমিকা রাখতে চায় সংস্থাটি। আর প্রযুক্তিটির ব্যবহার বাড়াতে প্রথম স্মার্ট বাংলাদেশ দিবসে সংস্থার অধীন বাংলাদেশের লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার্টিফিকেশন অথরিটি হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ডিজিটাল স্বাক্ষর সেবা দাতা সার্টিফাইং অথরিটি’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ফেয়ার প্যাটার্ন ইনকর্পোরেটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ই-স্বাক্ষর লিমিটেড।
চুক্তি অনুসারে, বিসিসি ই-স্বাক্ষর লিমিটেডকে তাদের উন্নয়নকৃত ডকুমেন্ট এবং প্রপোজাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য ই-সাইন পরিষেবা প্রদান করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো. শামসুল আরেফিন, সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) জনাব রণজিৎ কুমার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এটিএম জিয়াউল ইসলাম, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটি (সিসিএ), জনাব মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান, ইনচার্জ (সিএ অপারেশন অ্যান্ড সিকিউরিটি), বিসিসি এবং ই-স্বাক্ষর লি. এর পরিচালক মো: বজলুল হক।
বুধবার বিসিসি’র পক্ষ থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই চুক্তিকে স্মার্ট জাতি বিনির্মাণের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার একটি অন্যতম মাইলফলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এই প্রথম ই-সাইন ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।
চুক্তি বিষয়ে আইসিটি সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেছেন, “এই চুক্তি স্বাক্ষর আমাদের দেশের স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নির্দেশ করে। ই-স্বাক্ষর বাস্তবায়ন শুধুমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি কার্যক্রমে দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াবে না; উপরন্তু স্মার্ট অথর্নীতি বাস্তবায়নে নাগরিকদের আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।”
সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সিস্টেমে ই-সাইন বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “ই-সাইনের ব্যবহার ডিজিটাল সিস্টেমসমূহকে সহজ ও সুসংহত করার পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনে সংঘটিত প্রতারনামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে অধিকতর নিরাপদ করবে।”
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার জানিয়েছেন, বিসিসি ২০১০ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর আলোকে ডিজিটাল স্বাক্ষর এর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিসিসি ২০১৬ সাল থেকে সিসিএ কার্যালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে সরকারি সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। প্রযুক্তির প্রসার ও ডিজিটাল সিস্টেমসমূহের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবস্থাকেও সহজ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিসিসি ২০২১ সাল থেকে ই-সাইন চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে যার বাস্তবায়ন এ বছর সম্পন্ন হয়। বিসিসি’র এ ই-সাইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোন ডিভাইস থেকে যেকোনো সময়ে সহজেই ডিজিটাল ডকুমেন্টে ডিজিটাল স্বাক্ষর প্রয়োগ করা যাবে।এই চুক্তির মাধ্যমে বেসরকারি পর্যায়ে ডিজিটাল স্বাক্ষর কার্যক্রম সম্প্রসারণের পথে ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও এক ধাপ উত্তরণ ঘটলো।
ই-স্বাক্ষর লিমিটেডের পরিচালক মো: বজলুল হক জানিয়েছেন, তাদের উন্নয়নকৃত প্ল্যাটফর্মটি তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়মন ইসলামের একটি উদ্যোগ যেখানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মাইক্রোসার্ভিস আর্কিটেকচারসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের এ প্লাটফর্মটি কাগজের ব্যবহার হ্রাস করার পাশাপাশি ডিজিটাল ডকুমেন্ট ব্যবহার পদ্ধতিতে একটি নতুন ধারা তৈরি করবে। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে এ প্লাটফর্মটির ব্যবহার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ডকুমেন্ট ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল করবে। বিসিসি’র ই-সাইন সেবা সংযোজনের মাধ্যমে তাদের প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত ডিজিটাল ডকুমেন্টসমূহের সত্যতা ও শুদ্ধতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল ডকুমেন্টে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তির ডিজিটাল পরিচিতি আইনগতভাবে বৈধ ও প্রমাণযোগ্য হবে।