প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে ভবিষ্যতের প্রবেল সলভার হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঢাকায় শুরু হলো প্রোগ্রামিং বিশ্বকাপ আইসিপিসি’র ৪৫তম আসর। উদ্বোধনী আসরে আয়োজনের হোস্ট, কোচ, স্পনসর এবং আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার পরিচালকদের (আরসিডি) অবদানের স্মরণে ফলক উপস্থাপন করে আইসিপিসি ফাউন্ডেশন।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশন ফলক উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল আয়োজনের স্বপ্ন দেখা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সম্মান জানায়।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই জাতীয় অধ্যাপকের অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বীকৃতি স্বারক গ্রহণ করে মরহুম জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্ত্রী সেলিনা নওরোজ চৌধুরী। মঙ্গলবার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের গুলনকশা হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেয়া হয়।
আইসিপিসি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা সবার জন্য সহজ, সুলভ এবং ন্যায়সঙ্গত সমাধানসহ একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বিশ্ব গঠনে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রতীক- পররষ্ট্র মন্ত্রী
প্রোগ্রামিং হবে ভবিষ্যতের ভাষা। প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি, ভাষা এবং সমাজের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে সহায়তা করতে পারে- আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আতিথেয়তার প্রশংসা করেন আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার। তিনিবলেন, আইসিপিসি একটি ডিজিটাল বিপ্লব এবং ডিজিটাল মিলেনিয়ামের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সবাইকে একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যেতে হবে। আর সেই কাজ করতে হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে।
স্বাগত বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশে প্রবলেম সলভারদের আন্তর্জাতিক এই আয়োজনে সংশ্লিষ্টতা সহ বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে প্রোগ্রামিংকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে স্মরণ করেন। একই সুর প্রতিধ্বনিত হয় মাইকেল আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ কনটেস্ট এর পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু।
প্রযুক্তিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের রিয়েল গেম চেঞ্জার হিসেবে জাতিসংঘ সে স্বীকৃতি দিয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং আজ সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যতম অনুষজ্ঞ। আমরা ১৯৯৮ সাল থেকে আমরা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রতি বছরেই ভালো করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা দারুণ করছে।
বক্তব্যের ফাঁকে আবহ সঙ্গীতের নৃত্যকলায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সঙ্গে মেলবন্ধনের একটি ফিউশন তুলে ধরা হয় অভ্যাগত অতিথিদের সামনে।
এরপর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
বক্তব্যের শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের ‘চ্যাম্পিয়ন’ সম্বোধন করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গতকাল আমি প্রতিযোগিতার ভ্যেনুতে তিন জনের জন্য একটি পিসি দেয়ার কারণ জানতে চেয়ছিলাম। তখন জানতে পারি এটা টিম ওয়ার্কের জন্য। আমি মনে করি, ক্রিয়েটিভ, ক্রিয়েশন এবং কে-অপারেশনের মাধ্যেমে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
‘আজ যারা প্রোগ্রামার তারাই আগামী দিনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়ার নেতৃত্ব। তাই আইসিপিসি আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য এবং আমাদের আয়োজক করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আমি আশা করি, আজকের প্রোগ্রামাররা একটি উন্নত পৃথিবীর জন্য কোডিং করবে, প্রোগ্রামিং করবে। তাদের হাত ধরে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ রেখে যেতে পারব’- যোগ করে প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, “১৩ বছরে আইসিটি খাতে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। ১৩ বছর আগে আমাদের মাত্র ৫০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, এখন ১৩০ মিলিয়ন। প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। এখন সেটি ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার সফলতা অর্জন করেছি এবং সেই সফলতার ভিত্তিতে ২০৪১ সালের মধ্যে এখন আমরা টেকসই, জ্ঞাননির্ভর ও সৃজনশীল ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাই”।
পলক আরো বলেন, প্রোগ্রামিং হচ্ছে আগামী দিনের ভাষা। আজকের প্রোগামাররাই ভবিষ্যত বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। আমি আশা করবো সমাজ ও মানবতার কল্যাণেই আজকের প্রোগ্রামাররা তাদের কোড ব্যবহার করবেন।
সবশেষে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশ্ব-প্রযুক্তির বিকাশে হিসেবে তারুণ্যকে চালক হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, আগামীর ভাষা হবে প্রোগ্রামিং। এক্ষেত্রে তেমরাই হচ্ছ রাইজিং স্টার। তাই তোমাদের প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কেননা এখন প্রযুক্তির সময়। আমরা পূর্ণ গতিতে ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মানুষদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে যা যা করা দরকার, আমাদের সেগুলো করতে হবে। এমন আয়োজন তারই অংশ। একটি নতুন ডিজিটাল সমাজ গড়ে উঠছে। সবাই এতে যুক্ত হোন, এই সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। তা না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।
ভবিষ্যতের দুনিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চলবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এ কারণেই ডিজিটাল অকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার পাশাপাশি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে।
এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে অপব্যবহার না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
আগামী ১০ নভেম্বর ২০২২-এ বসুন্ধরার আইসিসিবিতে ৪৫তম আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ অনুষ্ঠিত হবে৷ সারা বিশ্ব থেকে ১৩৭টি দল এই বছরের ওয়ার্ল্ড ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। প্রতিযোগিতাটি উদযাপন করতে ৭০টি দেশ থেকে এক হাজারের বেশি অতিথি ঢাকায় অবস্থান করছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীসহ দেশি-বিদেশি প্রায় এক হাজারের বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সেলিব্রেশন অফ গ্লোবাল ইয়ুথ, দ্য কনভারজেন্স (মিউজিক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড এক্স এআই) এবং সাউন্ড অফ দ্য ন্যাশন বিষয়ক মোট তিনটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রদর্শিত হয়।