আজ মঙ্গলবার ৮ হাজার ৭৪৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে যুক্ত হয়ে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়া-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প।
এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয় ২১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। পাশ হওয়া অর্থে ১০৩টি বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়, ৬২৮টি স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়, ৭৬৯টি আসবাবপত্র সংগ্রহ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা। এ ছাড়া তিনটি যানবাহন ভাড়া বাবদ প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটি পাশ হওয়ায় ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনসাম) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার জন্য কিছু নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা এবং রোগীর সেবাকার্যক্র বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। দেশের উল্লেখিত জেলাগুলোর দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে সর্বশেষ এবং উন্নত পারমানবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে বলে আশা করছেন প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম।
তিনি জানিয়েছে, প্রকল্পটি রোগীর সেবাকার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। দেশের উল্লেখিত জেলাগুলোর দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে সর্বশেষ এবং উন্নত পারমানবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ইনস্টিটিউটগুলোর রোগ নির্ণয়ে সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং রোগীর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং পারমাণবিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পথ সুগম হবে। যা পরোক্ষভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
এর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন নানাবিধ গবেষণা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে পরমাণু চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। সাধারণ জনগণকে স্বল্পমূল্যে পরমাণু চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সস (ইনমাস) স্থাপনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। স্থাপিত ইনমাসগুলো পেটসিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ক্যান্সার, করোনারি আর্টারি ডিজিস, ব্রেইন ডিজঅর্ডার, আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনের মাধ্যমে যকৃত, পিত্তথলি, কিডনি রোগ, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের রোগ, থাইরয়েড, ব্রেস্ট ও অন্যান্য ক্ষুদ্র অঙ্গের পরীক্ষা, হাত ও পায়ের রক্তনালীর রোগ নির্ণয়, পেটের ধমনীর এ্যানুরিজম শনাক্তকরণ, বিএমডি মেশিনের মাধ্যমে অস্টিপ্রোসিস অর্থাৎ হাড়ের ক্ষয়রোগ নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা পরবর্তী উন্নতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়। এছাড়াও স্থাপনাগুলো রেডিওথেরাপির মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়।