বাংলাদেশের সংস্কৃতিক মূল্যবোধকে প্রাধন্য দিয়ে ভিডিও এবং কনটেন্ট মনিটরিং করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন টিকটকের লিগ্যাল পলিসি অপারেশনস কর্মকর্তা ক্যারি উডস। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে গত ৪ আগস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই আশ্বাস দিয়েছেন। ওই বৈঠকে ক্যারি-কে বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলের একটি স্যুভেনির উপহার দেন মন্ত্রী।
সেসময় অগ্রহণযোগ্য ভিডিও অপসারণ ও কন্টেন্ট প্রস্তুতকারী সনাক্তকরণে টিকটকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যারি আরো জানান, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার মতামত ও পরামর্শ আমলে নিয়ে কনটেন্ট ফিল্টারিং, ফেইক আইডি সনাক্তকরণ ও অগ্রহণযোগ্য ভিডিও কন্টেন্ট অপসারণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে । এছাড়া, বিটিআরসির সাথে পারস্পারিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়েও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের (TikTok) কনটেন্ট রিপোর্টিং ও অপসারণ এবং ব্যবহারকারীর তথ্য ও কমিউনিটি গাইডলাইন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যোগ দেন ক্যারি উডস।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন, সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মতামত বিবেচনায় নিয়ে টিকটকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইললাইন হালনাগাদ করে কন্টেন্ট মনিটরিংয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় তুল ধরেন টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পাবলিক পলিসি ম্যানেজার ফেরদাউস মোত্তাকিন।
দেশের আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিটিআরসির ডিজিটাল নিরাপত্তা সেলের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ওই বৈঠকে টিকটকের কনটেন্ট রিপোর্টিং ও অপাসারণ সংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রমের ওপর উপস্থাপনা করেন কমিশনের সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ।
এ সময় তিনি টিকটকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং দেশের বিদ্যমান আইনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, পারস্পরিক যোগাযোগ, জনমত তৈরি, সমাজসেবামূলক, সৃজনশীল ও অর্থনৈতিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহৃত হলেও নেতিবাচক ও অপরাধমূলক কার্যক্রমে এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে তিনি দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় রেখে সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে টিকটক ও দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে বাস্তবিক উপায় খোঁজার পরামর্শ প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বর্তমানে এই ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে ভালো কন্টেন্টের পাশাপাশি অনেক মানহানিকর ও অগ্রহণযোগ্য কনটেন্ট দৃশ্যমান হচ্ছে। রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী, মানহানিকর এবং ধর্মীয় উসকানিমুলক ভিডিও নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের সামজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গাইডলাইন প্রস্তুতের আহ্বান জানান তিনি।
টিকটক, তার কমিউনিটির জন্য আনন্দময় সব কনটেন্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির লিগ্যাল পলিসি অপারেশনস কর্মকর্তা কেরি উডস বলেন, বাংলাদেশের বাজার টিকটকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটি গাইডলাইন, গ্রাহকের সেফটি পলিসি এবং এদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে বিবেচনায় রেখে প্রতিনিয়ত প্ল্যাটফর্মটিতে ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে। এছাড়া, কন্টেন্ট মডারেশন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের একটি বড় টিম কাজ করছে, যারা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ভাষা বোঝেন। আগামীতে টিকটককে একটা নিরাপদ ও গ্রাহকবান্ধব প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
এসময় আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দাসংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাস্তবিক পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা হয় এবং অগ্রহণযোগ্য ভিডিও অপসারণ ও কন্টেন্ট প্রস্তুতকারী সনাক্তকরণে টিকটকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।