একবার ভাবুন তো, আপনার মোবাইলের পুরো নিয়ন্ত্রণ যদি অন্য কেউ নিয়ে নেয় কিংবা ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ সবকিছুর পাসওয়ার্ড কারো হাতে যায়-কেমন হবে তখন? হিডেন অ্যাপস ব্যবহার করে মোবাইল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ১১ জুন পর্যন্ত এই অপকর্ম করে আসছিলেন খোদ স্বামী। রাঙ্গামাটির আমানতবাগ এলকার এই ভুক্তভোগী অবশেষে সোমবার এই ঘটনার বিচার দাবি করে মামলা করেছেন চট্টগ্রমের সাইবার ট্রাইব্যুনালে।
বাদী মনিকা আক্তার রাঙ্গামাটি সদরের আমানতবাগ রোডের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী। তিনি রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কর্মাসের সদস্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত একজন উদ্যোক্তা।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই ভুক্তোভোগী। মামলাটি গ্রহণ করে ফরেনসিক রিপোর্ট সহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন মোহাম্মদ জহিরুল কবিরের আদালত। শুনানি শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মামলাটির ফরেনসিক প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আসামিরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, শাহিনা আক্তার, শহীদুল আলম স্বপন, হিমেল জীবন চাকমা এবং বেলাল হোসেন টিপু।
মামালার আইনজীবি মুহাম্মাদ গোলাম মওলা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই হিডেন অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনকে সিসি ক্যামেরা বানিয়ে এক নারী উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে এই অপপকর্ম করেছে তারই স্বামী ও তার দোসররা। বাদীর তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান না থাকায় তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তবে গত ১১ জুলাই বাদির মামি তাকে কিছু ভিডিও দেখালে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মোবাইল, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংয়ের এই ঘটনার তথ্য আদালতে উপস্থাপনের পর এজলাস ভর্তি আইনজীবীরাও অবাক হয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, বাদী মনিকার সঙ্গে আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের ১৭ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর নামে দান করা সাত শতক জমি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ দেন মোস্তাফিজুর। কিন্তু বাদী তাতে রাজি না হওয়ায় স্বামী বাদীর (স্ত্রীর) ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ মোবাইল ফোন হ্যাক করে তাতে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানাগেছে, আসামি গোপনে বাদির মোবাইল ফোনে ট্র্যাক ভিউ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তার ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নিয়ে নেন। এরপর থেকে তিনি এই ফোনটিকে সিসি ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন, যা দিয়ে বাদি যেখানেই যেতেন, যার সঙ্গেই কথা বলতেন তা ভিডিও করে তিনি বিভিন্ন জনের ফেসবুকে পাঠাতেন। একই প্রক্রিয়ায় বাদির ফেসবুক পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে সেটি গোপনে ব্যবহার করতে থাকেন। এছাড়াও ছবি ও ভিডিও এডিট করে সেগুলো ম্যাসেঞ্জার, ইমো ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় দু’জনে আলাদা থাকার পরও সর্বশেষ গত ১১ জুন বাদির সঙ্গে অপর এক ব্যক্তির ছবি যুক্ত করে পোস্ট করে।
এর মধ্যে বাদিকে না জানিয়েই তাকে তালাক দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন বাদি। পুরো বিষয়টি নিকটত্মীয়দের কাছ থেকে জেনে তিনি তার মোবাইল পরীক্ষা করিয়ে সব ডক্যুমেন্ট সংগ্রহ করে এই মামলা করেছেন। মামলায় আসামিদের একজন তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী এবং পাঁচজনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র উল্লেখ করে তাদের ফেসবুক লিংক ও আপত্তিজনক ভিডিও ও ছবি বিনিময়ের উপাত্ত সংযুক্ত করা হয়েছে।