যে কোনো দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিস যেন উদ্ধার কাজ চালাতে পারে সেটা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করার জন্য স্থপতি ও প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে স্থপতি ও প্রকৌশলীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে সরকার প্রধান বলেছেন, বহুতল ভবন বানাতে গিয়ে ফুটপাতগুলোর ওপর র্যাম্প তুলে দেওয়া হয়। এটা স্থপতি-প্রকৌশলীরাই করেন। ফুটপাতও দখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বহু এলাকায় কোনো ফুটপাত আর হাঁটার জন্য নেই। গুলশাল এলাকায় এত বিশাল বিল্ডিং বড়লোকরা বানাচ্ছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে ফুটপাতের ওপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে হচ্ছে। ফুটপাত কেন ব্যবহার হবে! ওখান থেকে তো জায়গা কিছু ছেড়ে দেওয়া যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, আমাদের স্থপতি ও প্রকৌশলী প্রত্যেককে একটি কথা মনে রাখতে হবে, যে কোনো একটি প্রজেক্ট যদি আপনারা তৈরি করেন তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপনের আধুনিক ব্যবস্থা আছে কি না সেটা যেমন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যদি কখন আগুন লাগে সেটা নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় কি না সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। বক্স কালভার্ট বা জলাধার ভরাট করে সব কিছু করা ঠিক না। তাতে ওইটাই হবে, যেখানে শুধু বিল ছিল সেখানে একটা বিল্ডিংয়ে অগ্নি নির্বাপনের জন্য পানি পাওয়া যায় না। ঢাকা শহর যেখানে অজস্র খাল-বিল-পুকুরের জায়গায়। বাংলাদেশটাই এ রকম। ভরাট করার আগে এ কথাটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যারা প্রজেক্ট তৈরি করেন, ফায়ার সার্ভিসের জন্য যেন সুবিধা থাকে সে বিষয়টা দেখতে হবে। তাদের গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা, তাদের পানি পাওয়ার ব্যবস্থা। এখন অনেক উঁচু তলা বিল্ডিং হয়। আমাদের এখন মাত্র ২০ তলা পর্যন্ত ফায়ার ফাইটিংয়ের সক্ষমতা আছে। সেখানে আমি দেখতে পাই, কেউ হয়তো ৩০ তলা বিল্ডিং করবে নানা রকম প্ল্যান করে বসে আছে। তার আগে এটা চিন্তা করতে হবে, এখানে কোনো দুর্ঘটনা দেখা দিলে উদ্ধার কাজ করার মতো সক্ষমতা কতদূর আছে। আমাদের সেই চিন্তা করেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা দেখাও আমাদের দায়িত্ব। আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে লঞ্চে বা স্টিমারে আগুন লেগে যাচ্ছে। এত বড় বড় জলযান সেখানে তাদের অগ্নি নির্বাপকের তেমন সুযোগ থাকে না।
রোববার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৫ বিভাগের ২৫ জেলার ৩৯টি উপজেলায় নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভবন তৈরির ক্ষেত্রে স্থপতি ও প্রকৌশলীদের প্রতিটি তলায় খোলা বারান্দা রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ল্যাডার দিয়ে একটা মানুষকে তুলে আনতে হলে শক্ত প্ল্যাটফর্ম দরকার। এক ইঞ্চি জায়গা কেউ ছাড়তে চায় না। ওইটুকু স্কয়ার ফিট ভাড়া দিলেই তো টাকা। টাকার জন্য এই অন্ধত্বটা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বসুন্ধরা শপিং মলে যখন আগুন লাগলো, তখন সেই আগুন নির্বাপনের তেমন ব্যবস্থা ছিল না। এই শপিং মলটি পান্থপথে যেখানে হয়েছে সেখানে ছিল খাল। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত, ওখানে নৌকাও আসতো। এলাকাটা ছিল বিশাল বিল এলাকা। সেই বিল এলাকা ভরাট এবং খালে বক্স কালভার্ট করার ফলে বসুন্ধরায় যখন আগুন লাগলো; যে বিল্ডিং গড়ে উঠেছে বিলের ভেতরে। সেই বিল্ডিংয়ে আগুন নেভানোর জন্য পানি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। পানি আনতে হয়েছিল সোনারগাঁওয়ের সুইমিং পুল থেকে। সে সময় মাত্র ৪ তলা পর্যন্ত পানি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, সে পর্যন্ত ল্যাডার ছিল। এরপর আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নেই যেন এই প্রতিষ্ঠান আরও সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে, আধুনিক হয়। বিভিন্ন সময় আগুন নেভাতে যারা যান, তাদের সুরক্ষা বিষয়ে কারো তেমন দৃষ্টি ছিল না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিয়ে আলাদাভাবে সরঞ্জামাদি কেনার ব্যবস্থা নেই। যুগোপযোগী করার বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম প্রতিটি উপজেলায় ফায়াস সার্ভিস স্টেশন অবশ্যই হতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।
ফায়ার ফাইটারদের আধুনিক প্রশিক্ষিত ও আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তাছাড়া বেশি কিছু ফায়ার ফাইটারদের বিদেশে ট্রেনিং করিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় ১ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নীত করার জন্য বিদেশে ট্রেনিং করিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মাত্র ২০৪টি ফায়ার স্টেশন ছিল, জনসংখ্যা বেড়ে গেছে—১৬ কোটি উপরে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি প্রত্যেকটা উপজেলা তো এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবেই, এছাড়া বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেখানে খুব জরুরি প্রয়োজন হতে পারে সেখানেও ফায়ার স্টেশন গড়ে তোলা হবে। বর্তমানে ৪৫৬টি ফায়ার স্টেশন আমাদের আছে, আজ আরও ৪০টির উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। আগামী জুনের মধ্যে আরও ৫৫টি তৈরি হয়ে যাবে।