শিক্ষায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের চেয়ে গেমিফিকেশন, ভার্চুয়ালাইজেশন, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন প্রযুক্তি ও শিক্ষাবিদেরা।
‘রিইমাজিন এডুকেশন : প্যারাডাইম শিফট এমিড কোভিড-১৯’ শীর্ষ ওয়েবিনারে কোভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পলিসি সহায়তা, আধুনিক কোলাবোরেশন টুলস, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং স্টুডেন্ট লাইফসাইকেল ম্যানেজমেন্ট সল্যুউশনের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ওয়েবিনারের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, বিশ্বব্যাপী মোট শিক্ষার্থীর ৯১ শতাংশ তথা এক দশমিক ছয় বিলিয়ন শিক্ষার্থী স্বশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের চেয়ে অধিক উন্নত প্রযুক্তি, যেমন- গেমিফিকেশন, ভার্চুয়ালাইজেশন, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মত প্রযুক্তি যুক্ত করার সময় এসেছে। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সমন্বিতভাবে শিক্ষাখাতে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করতে যাচ্ছে ও এডুকেশন ৪.০ যা ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর সাথে সম্পর্কিত তা বাস্তবের রূপ নিচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং তাদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ নিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাথে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। একইসাথে, ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকারত্বের বিষয়টিকে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার পরিবর্তন ও দক্ষতার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মাইক্রোসফটের এশিয়া প্যাসিফিক এডুকেশন পার্টনার পরিচালক ড. রানী সারোজেনি বার্চমোর বলেন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ ডিজিটাল লার্নিং সল্যুউশন বাস্তবায়ন করেছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশেও একই ধরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আমরা ইতিমধ্যেই কার্যকরী কৌশল গ্রহণে কাজ করেছি। তাৎক্ষনিকভাবে, কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইন ক্লাসের নীতিমালা প্রদান করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এই শিক্ষা রূপান্তর গ্রহণ করতে সমর্থ কিনা সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছি। সরকারের কাছ থেকে শিক্ষাখাতের পলিসি সহায়তা পাওয়া জরুরী এবং আমরা এ বিষয়ে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি।।
এসএপি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ইন্ডাস্ট্রি বিজনেস আর্কিটেক্ট অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, কোভিড-১৯ এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শক্তিশালী করতে প্রযুক্তির অনেক প্রয়োজন ছিলো। পরিপূর্ণ রূপান্তরে, আমাদেরকে অনলাইন এডুকেশন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ব্যাক অফিস ব্যবস্থাপনার স্বয়ংক্রিয় করতে কাজ করতে হবে। এসএপি ব্র্যাকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা করছে, এবং অন্যদেরকেও অবশ্যই সহায়তা করতে পারবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ডিজিটাল ডিভাইসের অপ্রতুলতার বিষয়টি থাকবে না। অনেক ক্ষেত্রেই সরকার জনগনকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এছাড়া আমরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের সহায়তা করা, ট্যাক্স কমানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত ও সাশ্রয়ী রাখতে চেষ্টা করছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা করতে আমরা প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছি।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ.কে. আজাদ খান বলেন, আমরা বেশ আগের থেকেই দূর-শিক্ষণ চালু করেছি এবং আরও কনটেন্ট তৈরির কাজ করছিলাম। কোভিড-১৯ সেটিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। আমরা আগের থেকে এখন বেশি সক্রিয়। আমরা আশা করছি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীসহ আমরা অধিক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারবো।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদিন বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন ইন্ট্যার্যাকশন বাড়াতে এআইইউবি ইতিমধ্যেই কার্যকরীভাবে টুলসের প্রয়োগ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে মাইক্রোসফট টিমসের সহায়তায় আমরা ১১ হাজার শিক্ষার্থীকে অনলাইনে যুক্ত করতে ও ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করতে পেরেছি।
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মিলান পাগন বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বিদেশি শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে না, বিশেষ করে এটি যদি অনলাইন এডুকেশনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আমরা কিছু নির্বাচিত মডিউল দেশে তৈরি করতে পারি এবং বাকিগুলো বাইরে থেকে তৈরি করে আনতে পারি।