এটুআই এর উদ্যোগে আজ থেকে চালু হলো অনলাইনে সরকারি সেবাপ্রাপ্তি, বিল পরিশোধ ও গ্রামীণ উৎপাদনকারীর পণ্য শহরের ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়ার ডিজিটাল মিউনিসিপালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম ‘একপে’, ‘একসেবা’ ও ‘একশপ’। আজ ১৬২টি সেবা নিয়ে চালু হলেও পর্যায়ক্রমে স্বল্পতম সময়ে ৩ হাজার সেবাকে একশপে নিয়ে আসা হবে। ১০টি পৌরসভার মাধ্যমে শুরু হলেও ২০২১ সালের মধ্যে ৩২৯টি পৌরসভায় একপে ৫টি সেবা চালু করা হবে।
রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে সেবাগুলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বলেছে তারুণ্য ও আইসিটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি। তাই তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের মানুষের হাতের নাগালে সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনে ছাত্রদের মধ্যে ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ জয়। তখন ৪ হাজার দরিদ্র মেধাবীর হাতে ল্যাপটপ তুলে দেয়া হয়েছিলো। আজ তারা প্রত্যেকে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন আর টিউশনি করতে হয় না। মানুষের কাছে টাকা চাইতে হয় না। মানুষের কাছে টাকার জন্য হাত পাততে হয় না। ল্যাপটপগুলো বিশ্বজয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের অনুরোধে এবার একই প্রকল্পের অধীনে আজ ১০০জনকে ল্যাপটপ দিচ্ছি।
তিনি বলেন, লার্নিং আর্নিং উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১০ বছরে আমরা ১৩ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করেছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৪০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৮টি জেলায় প্রক্রিয়াধীন থাকলেও শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন ও ট্রেনিং সেন্টার ৬৪ জেলায় স্থাপন করা হবে।
বক্তব্যে ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতিতে নাগরিক সেবার এই কার্যক্রম চালু হওয়ায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ছাড়াও ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ, টুঙ্গিপাড়া, পীরগঞ্জ, সিংড়া, তারাব ও রামগতি পৌরসভা এলাকার নাগরিকরা অনলাইনে মিউনিসিপালিটি/সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবা পাওয়ার পাশাপাশি হোল্ডিং ট্যাক্স ও বিভিন্ন সরকারি সেবার বিল দিতে পারবেন বলে জানান জুনাইদ আহমেদ পলক।
২০০৫ সালে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্স সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ১৬২। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ঘোষণার পর আমরা এখন ১১৫ অবস্থানে চলে এসেছি।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে এই সেবাগুলোর উদ্বোধন ছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশের ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-গভর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এই ‘ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান’ রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়।
এসময় কিছুদিন আগে এটুআইয়ের আরেকটি উদ্যোগ ‘বেস্ট সিটিজেন এনগেজমেন্ট প্রকল্পের অধীনে চালু ‘৩৩৩’ সেবার জন্য প্রাপ্ত “গভইনসাইডার ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯” সম্মাননাটি আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের হাতে তুলে দেন এটু্আইয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান।
এরপর ‘ডব্লিউআইটিএসএ গ্লোবাল আইটিসি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ হস্তান্তর করেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম। পাশাপাশি ‘ডিসিডি এপিএসি অ্যাওয়ার্ড’ ২০১৯ সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব।
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় ১০০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর মাঝে ১০০টি ল্যাপটপ বিতরণ করেন সজীব ওয়াজেদ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হু কাং-ইল প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।