সাম্প্রতিক সময়ে বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে চলছে কর্মী ছাঁটাইয়ের মচ্ছব। মাইক্রোসফট কিছুদিন আগেই ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। ফেসবুকও বিদায় জানিয়েছে ১১ হাজার কর্মীকে। টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক টুইটারের মালিক হওয়ার পর ৬০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছেন। অ্যামাজনও ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে।
একইভাবে গত মাসেই সারা বিশ্বের প্রায় ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন গুগল প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই। সেই ঘোষণার পর এবার নিজের দেশের ৪৫৩ কর্মীকে বরখাস্ত করেছে গুগল ইন্ডিয়া। গুগল ইন্ডিয়ার প্রধান ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় গুপ্ত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কর্মীদের মেইল করে এই ছাঁটাইয়ের কথা জানান।
এ নিয়ে এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, এই ৪৫৩ জন ১২ হাজারের অংশ কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ঘোষণার সময় ওই সিদ্ধান্তের দায় সম্পূর্ণভাবেই নিজের বলে জানিয়েছিলেন পিচাই। কিন্তু আয় বা রাজস্ব কমে যাওয়ার দোহাই দিয়ে কর্মীদের ছাঁটাই করা হলেও পিচাইয়ের ‘দুর্দান্ত পারফরম্যান্স’-এ খুশি হয়ে গত ডিসেম্বর মাসে গুগল তার বেতন বিপুল হারে বাড়িয়েছে।
এক দিকে নিজের বেতন বৃদ্ধি আর অন্য দিকে বিপুল পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই- এমন বাস্তবতায় পিচাইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কোনো কোনো মহল।
এমন পরিস্থিতিতে গুগলের বৈশ্বিক প্রধান সুন্দর পিচাই বলেছেন, মহামারির দুই বছরে প্রচুর কর্মী নিয়োগ দিয়েছে গুগল। কোম্পানির প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় এই ছাঁটাই করতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার সময় এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
চলতি বছরের শুরুতেই গুগলের কর্মীদের ‘গুগলার’ বলে সম্বোধন করে মেইল করেছিলেন পিচাই। সেই বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, ‘সবাইকে একটি খারাপ খবর দেওয়ার আছে। গুগল থেকে ১২ হাজার কর্মীকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। এ জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি জানি, এটা কতটা কঠিন। এত দিন সবার প্রচেষ্টায় আমাদের কোম্পানি সাফল্যের পথে হেঁটেছে। সবার অবদান প্রকৃত অর্থেই অনস্বীকার্য। ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্তের দায় সম্পূর্ণভাবে আমার। গত দুই বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আমরা বিনিয়োগ করেছি। মান বজায় রাখার পাশাপাশি পরিষেবা খাতেও উন্নয়ন বজায় রেখেছি।’
জানুয়ারি মাসে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মাসে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে প্রযুক্তি খাতে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সব মিলিয়ে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো থেকে প্রায় দেড় লাখ কর্মী ছাঁটাই করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারির সময় মানুষের বাড়তি প্রযুক্তি চাহিদা মেটাতে বিপুল কর্মী নিয়োগ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ করায় এখন কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো।