২০ বছর বয়সী এক নারীর অবিকশিত কান বদলে তারই কোষ থেকে থ্রিডি-বায়ো প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন একটি কান সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার মার্কিন চিকিৎসদের এই সফলতার বার্তা দিয়েছে বিশ্বগণমাধ্যমগুলো। বলা হয়েছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রযুক্তির জন্য ২০২২ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
মেডিকেল এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, গত মার্চে অ্যালেক্সা নামের ২০ বছর বয়সী মেক্সিকান তরুণী অ্যালেক্সার দেহে অস্ত্রোপচার করে ওই নতুন কান বসানো হয়। অস্ত্রোপচারটি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। জ্যান্ত কোষ থেকে থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণ কান গঠন এবং তা প্রতিস্থাপনের এই পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে রয়েছে থ্রিডিবায়ো থেরাপিউটিক্স নামের একটি কোম্পানি। আর প্রতিস্থাপনে নেতৃত্ব দিয়েছেন টেক্সাসের সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক মাইক্রোশিয়া-কনজেনিশিয়াল এয়ার ডিফরমেটি ইনস্টিটিউট (Microtia-Congenital Ear Deformity Institute) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শল্যবিদ আর্তুরো বোনিলা। প্রতিস্থাপন শেষে তিনি বলেছেন, “সব যদি পরিকল্পনা মাফিক করা যায়, তাহলে এই প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাবে।”।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ‘টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং’ বা কোষ প্রকৌশলের ক্ষেত্রে ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের এই সাফল্যকে।
কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিসিন ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক অ্যাডাম ফেইনবার্গ বলেন, “কান অঙ্গ হিসেবে যকৃতের মত জটিল নয়, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে অতি প্রয়োজনীয়ও নয়। তাই সম্ভাব্য ভবিষ্যতের পথটা এখনও অনেক দূরের।”
জানাগেছে, বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়া কানের বায়োপসি করে কার্টিলেজ কোষ সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা। সেই কোষগুলো পরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বাড়তে দেওয়া হয়। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব কোষকে পরে দেওয়া হয় রোগীর কানের আকার। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিস্থাপিত কানে প্রতিনিয়ত কোষের মৃত্যু ও বৃদ্ধি ঘটবে স্বাভাবিক কানের মতই।রোগীর নিজের কোষ থেকে তৈরি হওয়ায় নতুন ওই অঙ্গকে রোগীর শরীরের প্রত্যাখ্যান করার শঙ্কাও কমে যাবে।
প্রসঙ্গত, মাইক্রোশিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্মের সময় একটি বা উভয় কানের বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, ক্ষেত্রবিশেষে কানের বাহ্যিক অংশের পুরোটাই থাকে না। এ রোগের চিকিৎসায় থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে থ্রিডিবায়ো থেরাপিউটিক্স। গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন ১১ জন মাইক্রোশিয়া রোগী। আর এ কোম্পানি রোগীর নিজের কোষ ব্যবহার করে বানানো কানের নাম দিয়েছে ‘অরিনোভো ইয়ার’।