স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রতিটি খাতেই চলছে ডিজিটাল রূপান্তর। এই যেমন মুঠোফেনে হচ্ছে লেনদেন। ডিভাইসে থাকা তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে হ্যাকাররা। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও রয়েছে ঝুঁকিও। ফলে ফিনটেকসহ প্রতিটি খাতের ডিজিটাল রূপান্তরকে টেকসই করতে ইন্স্যুরটেকের নীতিমালা প্রণয়রে জোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকে এই দাবি তুলেছেন বক্তারা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে ইন্স্যুরটেকের গুরুত্ব’ নিয়ে বেসিস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায়, বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বীমাকে আরও সহজলভ্য, কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী করতে ব্যবহার করতে হবে প্রযুক্তি।
এদের মধ্যে বিডিজবস প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেছেন, দেশের বীমা খাতে উন্নয়নের মূল ধারার বীমা কোম্পানিগুলো ও ইন্স্যুরটেক কোম্পানিগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। এছাড়াও তিন থেকে ৫ বছরের জন্য স্থানীয় ইন্স্যুরটেক কোম্পানিগুলোকে বিদেশী কোম্পানিগুলি থেকে অসম প্রতিযোগিতার থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরী করা দরকার। ইন্স্যুরটেক বাংলাদেশের বীমা শিল্পের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার। ইন্স্যুরটেক পরিষেবাগুলিকে উন্নত করতে এবং গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি নির্ভর উদ্ভাবনের খোঁজ করা আবশ্যক।
গোলাটেবিল আলোচনার শুরুতে বেসিস ইন্স্যুরটেক স্টার্টআপ আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেডের কোফাউন্ডার ও সিইও ফিদা হকের সঞ্চালানায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসিনা শেখ।
উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশে এর মধ্যেই অর্ধশতাধিক ইন্স্যুরটেক কোম্পানি কাজ শুরু করেছে প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বীমা সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু যেহেতু ইন্স্যুরটেক বিষয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা বা রেগুলেশন নেই, সেহেতু এই খাতে প্রতযোনীয় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হচ্ছে না। বর্তমানে লাইসেন্স প্রাপ্ত বীমা কোম্পানিগুলোই শুধুমাত্র ইন্সুরেন্স সেবা দিতে পারে। কিন্তু, আমাদের আশেপাশের অনেক দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), আই-ও-টি (IOT), ডাটা-সাইন্স নির্ভর নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী বীমা সেবা বাজারে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে নতুন প্রজন্মের ইন্স্যুরটেক ও ফিনটেক কোম্পানিগুলো। ইন্স্যুরটেক খাতে প্রচুর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশে। কিন্তু আমাদের দেশে ইন্স্যুরটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর আলাদা আইনগত স্বীকৃতি না থাকাতে এই খাতে যথেষ্ট পরিমান বিনিয়োগ হচ্ছে না । গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন বাংলাদেশে জনসংখ্যার মাত্র ৫% -এর কম বীমা সেবার আওয়তায় আছে। প্রতিবেশী দেশগুলিতে এই হার ২০-৩০% এর উপরে, কেননা সেখানে প্রযুক্তিনির্ভর ইন্স্যুরটেক কোম্পানিগুলো বীমা বাজার তৈরী করার ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বেসিসের পক্ষে থেকে একটি খসড়া ইন্স্যুরটেক গাইডলাইন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন “বাংলাদেশে বীমা শিল্পকে নাগরিকদের আরও সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের সেবা প্রদান করা সম্ভব। আমরা একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি। সেজন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার অপরিহার্য। এবং খুব শীঘ্রই আইডিআরএ ইন্স্যুরটেক শিল্পের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে।”
বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স এসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ পাভেল বলেন, “সারা বিশ্বে ইন্স্যুরেন্সের ব্যবহার ৭% শতাংশেরও বেশি, তাইওয়ানের ক্ষেত্রে যা ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে বীমা সেবার প্রসারে ইন্স্যুরটেকের প্রয়োজনীতা অনেক বেশি। বীমাসেবার বিভিন্ন পর্যায়ে যারা কাজ করছেন সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে বাংলাদেশেও বীমা ক্ষেত্রে উত্তর উত্তর প্রসার ঘটবে।”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখার অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুর রহিম খান এবং ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এনএপিডি) এর মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম জিয়াউল হক এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুর রহমান।