রেলের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হ্যাকাথন আয়োজন করতে যাচ্ছে আইসিটি বিভাগ। দেশের তরুণদের মেধা দিয়েই বিদ্যমান সমস্যার টেকসই সমাধান বের করা হবে বলে জানিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
মঙ্গলবার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রেলওয়ে: চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকারসমূহ, শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমটাই জানিয়েছেন তিনি। জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আরও বেশী প্রযুক্তি ও যাত্রীবান্ধব করার জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ইতিমধ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসারও আহবান জানান তিনি।
পলক আরো বলেন, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি ডিভিশন যৌথ উদ্যোগে আমরা একটা হ্যাকাথন আয়োজন করবো। সেখা রেলওয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করতে পারি।
এই মনোবলের অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরো ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে আমাদের নিজস্ব মেধা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচয়, ই-নথি, মাইগভ, মুক্তপাঠ ও সুরক্ষার মত সফল এবং প্রশংসিত প্ল্যাটফর্ম তৈরি ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কেইস ম্যানেজমেন্ট, লাইভ অপারেশন ড্যাশবোর্ড, ইন্টিগ্রেটেড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, জি আর এস, ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পরিচয় পোর্টালের সমন্বয়ে খুব সহজেই রেলওয়ের সমস্যাগুলোর প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক তার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদের নাম্বার ব্যবহার করে খুব সহজেই রেলওয়ের টিকেট ও অন্যান্য সেবা নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল বৈশিষ্ট হবে- ইনটেলিজেন্ট, ইনোভেটিভ, ইফিশিয়েন্ট, ইনক্লুসিভ এবং সাস্টেইনেবল। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্মার্ট ও যাত্রী বান্ধব রেলওয়ে বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আইসিটি ডিভিশন ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ূন কবীরের সভাপতিত্বে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, রেল সচিব হুমায়ুর রেজা, সাবেক সচিব সেলিম রেজা, বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর সিরডাপ এর সিআইসিসি মিলনায়তনে ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রেলওয়ে : চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে জনবান্ধব ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সরকার ৩০ বছর (২০১৬-২০৪৫) মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ৬টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই মাষ্টার প্লানে ২৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে, দেশের সব জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ফরহাদ জাহিদ শেখ। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরকার জনস্বার্থে রেলসেবার মান বাড়াতে ৮ম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭৯৮ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন নির্মাণ, ৮৯৭ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ, ৮৪৬ কিলোমিটার বিদ্যমান রেললাইন পুনবার্সন, ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু নির্মাণ, লেভেলক্রসিং গেটসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইসিডি নির্মাণ, ওয়ার্কশপ নির্মাণ, ১৬০টি নতুন লোকোমোটিভ, ১ হাজার ৭০৪টি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ২২২টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, নতুন আইসিডি নির্মাণসহ রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্র্যাক, সিগনালিং, রোলিং স্টক, রক্ষণাবেক্ষণ ও মানব সম্পদে পরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে রেলওয়ের সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে রেলওয়ে খাতকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা করেছে । রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে যে ছয়টি পর্যায়ে উন্নয়ন হবে, তা হলো- রোলিংস্টক প্রকল্প, সিগনাল এবং টেলকম প্রকল্প, ওয়ার্কস প্রকল্প, রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, গেজ রূপান্তর প্রকল্প, ট্রেন পরিচালনায় সহায়তা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্প।