পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে দেশে ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ। গত ১২ বছরে ডেটার ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০০ শতাংশ। ২০০৮ সালে যেখানে ৭ দশমিক ৮ জিবিপিএস ডেটা ব্যবহৃত হতো। চলতি বছরের ২৫ মে পর্যন্ত সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫৩ জিবিপিএস-এ। অথচ চলতি বছরের মার্চে এই পরিমাণ ছিলো ৩৪০০ জিবিপিএস। অর্থাৎ মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে এই ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫৩ জিবিপিএস। আর ২০০৮ থেকে হিসাব করলেই এই প্রবৃদ্ধির অংশ ৪৯৩.৯৭ শতাংশ।
শনিবার (২৮ মে ২০২২) ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স (বিডিসিগ) এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই তথ্য দিয়েছেন বিটিআরসির সিস্টেম ও সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ। সাধারণভাবে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে তিনি জানান, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৮ শতাংশ দেশের মোট ব্যান্ডউইথের।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র একটি পরিমাপক দিয়ে মাপা সম্ভব ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। আর তা হচ্ছে- ডেটা। দেশে সাবমেরিন ক্যাবল ও ৬টি আইটিসি দিয়ে এই ডেটা আসছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গত ২৫ মে পর্যন্ত দেশে ডেটা ব্যবহৃত হয়েছে ৩৮৫৩ জিবিপিএস। এটা একটা পাগলা ঘোড়া ছুটতেছে। এটা এমন একটা নেশা; একবার ঢুকলে বের হওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের আপডেট করতে না পারলে পিছিয়ে যেতে হবে। তাই ব্যক্তি মানুষকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। দিন শেষে দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে প্রচুর আইটি দক্ষ লোক লাগবে। তখন স্মার্ট ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রি রেভ্যুলেশনে প্রযুক্তি জানতেই হবে।
নাসিম পারভেজ আরো বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে এবং প্রান্তিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার এক দেশ এক রেট চালু করেছে। হাওর ও পার্বত্য এলাকা, দ্বীপ এলাকায় স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক প্রকল্প, হাওর ও দ্বীপসমুহে হাই-স্পিড মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, হাওড় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিটিআরসি।
স্কুলে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির আলাদা কোনো ভাষা নেই। এটার কোনো আফ্রিকা-আমেরিকা নেই। সাদা-কালো বলে কিছু নাই। ধনী-গরিব নেই। একই ভাষা। তাই এখানে যদি আপনারা দক্ষ হতে পারেন তবে গ্লোবাল টেক এক্সপার্ট হতে পারবেন।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনএনআরসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিআইজিএফ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এইচএম বজলুর রহমান। তিনি বলেন, জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান সংরক্ষণ, জ্ঞান প্রচার এবং জ্ঞান ব্যবহার-এর জন্য সরকারের সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতিগত পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংলাপ ও আলোচনা সভা পরিচালনার মাধ্যমে বিডিসিগ অংশীজনদের সক্ষমতা জোরদার করার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট দুনিয়ায় নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা এবং পরিবর্তীত সময়ের দক্ষতায় সমানতালে এগিয়ে যেতে বিটিআসি’র সঙ্গে যৌথভাবে এই স্কুল করা হচ্ছে।
তিনদিনব্যাপী স্কুলে ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি প্রক্রিয়া, ইন্টারনেট গভর্নেন্স প্রক্রিয়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং কি নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশের ডেটা বিজ্ঞানী রাকিবুল হাসান। হাতে কলমে মেশিন লার্নিং: টাইটানিক প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। শুণ্য থেকে পাইথন মেশিন লার্নিংয়ের বেবি স্টেপ সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয় কর্মশালায়। চর্তুথ শিল্প বিপ্লবের ক্যারিয়ার টক, ফেলোশিপ অপরচুনিটি ইন আইজি প্রসেসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কর্মশালায় আলোচক ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শাফায়েত হোসেনসহ সংশ্লিষ্টা বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে প্রথম বিডিসিগ অনুষ্ঠিত হয়। ৬ষ্ঠ বিডিসিগ-এ সত্তরজন ফেলো অংশগ্রহন করেন।