নেড়েচেড়ে কেনায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার কোভিড সময়ে ই-কমার্স আগ্রহী হন উল্লেখ করে বলেন, কেউ যখন ই-কমার্স ব্যবসা করে তখন নিজেদেরকে জেফ বেজোস বা জ্যাক মা মনে করতে শুরু করেন। আর লোকজন না ধরেই বিশ্বাস করে আপনাদের পণ্য কেনে। তাই তাদের প্রত্যাশা পূরণে এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জহলো রিফান্ড অ্যান্ড রিটার্ন পলিসি। এটা যত উন্নত হবে এই খাতের ব্যবসা দ্রুত বাড়তে শুরু করবে।
বর্তমান ইসি কমিটির প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, আপনারা কোভিডে ওয়ান্ডারফুল জব করেছেন। আসলেই আপনারা জাতীয় প্রয়োজন মিটিয়েছেন। কোভিড না আসলে আপনাদের প্রয়োজন মানুষ বুঝতো না। কোভিড যেমন আমনাদের ব্যবসা দিয়েছে। আপনারাও তেমনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আমি মনে করি এটা আপনাদের বিরাট সফলতা। আর বড় দুর্বলতা হলো, পৃথিবীতে সরকার প্রো-অ্যাক্টিভ হয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করলেও আপনাদেরকে সরকারের কাছে গিয়ে প্রত্যেকটা বিষয় বোঝাতে হয়- এসক্রো সিস্টেম কি, বিজনেস মটেল কি; আপনাদের আইন আপনাদেরই বানাতে হয়; আবার সেটা করে সেটার ফল্ট বের করতে হয়। আগামী ১০ বছর পর সবাই আপনাদের অবদান বুঝবে। তারা বুঝবে আপনারা এতোদিন ধরে কী করেছেন।
ই-ক্যাবের চতুর্থ দ্বিবার্ষিক কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোমবার রাতে বনানীর একটি রেস্তোরায় অনুষ্ঠিত সম্প্রীতির মঞ্চে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন ই-কমার্স খাতের অন্যতম গঠনমূলক সমালোচক আব্দুন নূর তুষার।
অনুষ্ঠানে ই-ক্যাব নির্বাচনে প্রার্থীদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনাকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন নিয়ে কেউ যেন নেতিবাচক পথে না হাটেন এবং বিজয়ের পর একসঙ্গে মিলেমিশে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যান সেই পরামর্শ দেন খাত সংশ্লিষ্ট নেতারা।
এদের মধ্যে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ব্যবসায় হারাতে হয়। তবে তারপরও যখন সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোনো কিছু করতে পারি তখন তা ভুলে পরিতৃপ্ত হই। তাই যারা ব্যবসা বা মুনাফা নিয়ে বেশি মনোযোগী নয় তাদের মাধ্যমে সংগঠন খুব বেশি উপকৃত হয়। তাই যারাই নির্বাচিত হবেন তাদের মনে রাখতে হবে আগামী ৩ বছর তারা তেমন একটি ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি করতে পারবেন না।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ক্ষমতার বাইরের প্রতিশ্রুতি দেয়াটা প্রার্থীদের জন্য ভোটে বুমেরাং হয়। মধুর মধুর কথা বলে ভোটারদের বেকুব ভাবা অনুচিত। কেননা, এই ধরনের নির্বাচনে একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি ও সিইওরা ভোট দেয়ার আগেই সেই গন্ধটা পেয়ে যান।
বিসিএস সাবেক সভাপতি শাহিদ উল মুনীর বলেন, যারাই ভোটে জিতেন না কেনো যে ৩৬ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন ভোটের পরেও তারা সক্রিয় থাকলেই বোঝা যাবে তিনি প্রকৃত অর্থেই সংগঠনকে ভালোবাসেন। আমরা আসা করি সবাই মিলে ই-ক্যাবকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, আজ আমি আমাদের প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজীব ভাইকে স্মরণ করছি। কারণ তিনি ই-ক্যাবের সভাপতি পদ ছাড়ার পরও আমি তার কাছ থেকে অনেকে সহযোগিতা পেয়েছি। পাশাপাশি আজকে ই-ক্যাব যতটা ভাইব্রেন্ট অবস্থানে এসেছে তাতে লাস্ট ইসি ও কমিটির অবদান। তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। যদিও এটি একটি থ্যাংকলেস জব। সব সদস্যদের মধ্যে দুই-একজন যদি দুর্নামের কাজ করে তাতে কমিটির দোষ দেয়ার উপায় নেই। তারপরও এটা রুখতে আমরা আগামীতে সদস্যপদ নিশ্চিত করার আগে ছয় মাস নজরদারিতে রাখা হবে। কাজের যে জায়গাগুলোকে গ্যাপ ছিলো তা পূরন করেই এগিয়ে যাবো। সবাইকে সাথে নিয়েই তা করবো।
অনুষ্ঠানে চেঞ্জমেকার্স টিমের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চালডাল সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আলিম, শাফকাত হায়দার (সিপ্রোকো কম্পিউটার লিমিটেড, জিসান কিংশুক হক (সিন্দবাদ), বিপ্লব ঘোষ রাহুল (ই-কুরিয়ার),আবু সুফিয়ান নিলাভ (নিজল ক্রিয়েটিভ), ইলমুল হক (সেবা এক্সওয়াইজেড) ও নুসরাত আক্তার লোপা (হুর নুসরাত)। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মোঃ তাসদীখ হাবীব, মোজাম্মেল হক মৃধা সোহেল (কিনলে ডট কম) উপস্থিত ছিলেন।
এরপর শমী কায়সারের নেতৃত্বে অগ্রগামী প্যানেলের প্রার্থীরা ছাড়াও বক্তব্য দেন ই-ক্যাব অর্থ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু। এসময় তিনি ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠা সময়ের মর্মস্পর্শী ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন, যখন আমরা ই-ক্যাব গঠন করি, তখন নিবন্ধন কার্যক্রম বাবদ দুই দিনের মধ্যে একটা মোটা অংকের অর্থ জোগাড় করতে হবে। তখন আমি, তমাল এবং রাজিব ভাই এই অর্থ ভাগ করে দেই। যখন জানতে পারি, রাজীব ভাই তার স্ত্রী’র স্বর্ণলঙ্কার বেঁচে তার ভাগের অর্থ জমা দিয়েছেন তখন আমার চোখে পানি চলে আসে। তবে আজ আমরা গর্বিত যে, গত ১০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আমার আজ ই-ক্যাবকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি, আজকে ৩৬ জন ই-ক্যাব স্টাররা নেতৃত্ব দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, ফুডপান্ডা সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা আম্বারীন রেজা,পেপার ফ্লাই সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হাসান, দেশের প্রথম অনলাইন ফার্মেসি ডায়াবেটিস স্টোর সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ সাহাব উদ্দিন, ব্রেকবাইট সহপ্রতিষ্ঠাতা আসিফ আহনাফ এবং কমপিউটার জগৎ টেকনলোজিস প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিজিটাল হাব প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ সাইদুর রহমান, ফোকাস ফ্রেম প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রুহুল কুদ্দুস ছোটন এবং অর্নব মোস্তাফা।
ভোটারদের মধ্যে বেসিস পরিচালক আবু দাউদ খান, রকমারি ডটকম প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুর রহমান সোহাগ বক্তব্য রাখেন। এরপর নির্বাচনে অংশ নেয়া ১৮ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ক্রাফটম্যান সল্যুশন প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ সাজ্জাদুল ইসলাম, সওদাগর ডটকম প্রতিষ্ঠাতা আরিফ চৌধুরী, যাচাই ডটকম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ, মেনেসেন মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী তৌহিদা হায়দার এবং আইএক্সপ্রেস সিইও কামরুল ইসলাম।
সবশেষে খুবই কমসময়ে ই-কমার্স খাত ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতা ও শুভাকাঙ্খীরা ই-ক্যাব এর অগ্রযাত্রাকে শক্তিশালী করার পক্ষে সম্প্রীতির বন্ধনে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণকে সাগত জানান আয়োজকরা। আয়োজকদের পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আজকের ডিল প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর এবং স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ানা খান।