মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জাল ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেফতার পাঁচজন হলো- সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মওলা খান, তার ছোট ভাই গোলাম রসুল খান, জাল ওয়েবসাইট ডেভেলপার আবুল খায়ের পারভেজ, মো. আতিকুর রহমান রাসেল ও রাহাত হায়দার চৌধুরী রানা।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সরকারি নথিপত্র ও ওয়েবসাইট জাল করার কথা স্বীকার করে তারা।
চট্টগ্রাম সিআইডি’র দেওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায়, সরকারি নথি জাল ও ওয়েবসাইট নকলের অভিযোগে জড়িতদের ধরতে প্রথম অভিযানে গ্রেফতার করা হয় সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মাওলা খানকে। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় ব্যবসায়ী অংশীদার গোলাম ফারুক খান এবং আবুল খায়ের পারভেজ নামে আরো দু’জনকে। এর মধ্যে আবুল খায়ের পারভেজ হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট নকল করার মূলহোতা। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরণের আরো ৩-৪টি নকল ওয়েবসাইট তৈরি করার কথা পারভেজ স্বীকার করে সিআইডির কাছে। এরপর এই সিন্ডিকেটে মন্ত্রণালয়ের নথি জাল করা রাসেল এবং রানাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে কম শুল্কের পিনাট এবং অলিভ আমদানির নামে উচ্চ শুল্কের গুড়ো দুধ আনার ঘটনা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জব্দকৃত মালামাল ছাড়িয়ে নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও ওয়েবসাইট নকল করলে কাস্টমসের অনুসন্ধানে তা ধরা পড়ে যায়। পরে কাস্টমসের পক্ষ থেকে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ১৩ অক্টোবর সিপি বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেকটি চিঠি দাখিল করেন। দুইটি চিঠির মর্মার্থ অনুযায়ী বিএসটিআই’র ছাড়পত্র এবং কমিশনারের বিচারাদেশ অনুযায়ী শুল্ককর ও জরিমানা দেওয়া সাপেক্ষে চালানটি খালাসের সিপি দেওয়া হয়েছে।
চালানটি খালাসে দাখিল করা সিপি এবং অন্যান্য দলিলাদি যাচাইকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি এর হেডিংয়ে যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা (www.mincomgov.com) রয়েছে তাতে দাখিল করা সিপি’র কপিও পাওয়া গেছে। তদুপরি শুল্কায়ন গ্রুপের কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সিপিতে স্বাক্ষরকারী উপসচিবের সঙ্গে সরাসরি ফোনালাপে জানা যায় দাখিল করা সিপি ভুয়া।
প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকারক বরাবর জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে-ঘোষণাবহির্ভূত আমদানিকৃত পণ্যটি শিশুখাদ্য ও বিএসটিআই’র আওতায় শর্তযুক্তভাবে আমদানিযোগ্য হওয়ায় বিদ্যমাণ আমদানি নীতি আদেশের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ প্রতিপালিত হয়নি বিধায় সিয়াম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে সিপি ইস্যু করার কোনো সুযোগ সেই মর্মে নির্দেশক্রমে অবহিত করা হলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে-www.mincom.gov.bd।