সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ বেশ দ্রুত মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)এর ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে ৩% মানুষের একাউন্ট ছিল যা ২০১৯ এ বেড়ে হয়েছে ৩৫%; এবং কোভিড-১৯ এর সময়ে এই হার আরও বাড়ছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (বিআইজিডি) সাম্প্রতিক একটি গবেষণা অনুযায়ী জরীপে অংশ নেয়া ১৫% পরিবার জানিয়েছিল, তারা এপ্রিল থেকে জুনের মাঝে নতুন একটি এমএফএস একাউন্ট খুলেছে। এই একাউন্ট যারা খুলেছিল তাদের আশা ছিল সরকার থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য পাবে। ২৯ জুন পর্যন্ত এই একাউন্টধারীদের এক-তৃতীয়াংশ সরকারের তরফ থেকে কিছু অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়েছে।
রবিবার “লাস্ট মাইল এক্সপেরিয়েন্স অফ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ডিউরিং কোভিড-১৯” শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে টেলিফোনের মাধ্যমে ৩,১৬৩ জনের ওপর করা একটি জরিপের ফল তুলে ধরা হয়।
এই সমীক্ষা পরিচালনা করেন বিআইজিডির গবেষক ডঃ জুলকারিন জাহাঙ্গীর, আবদুল্লাহ হাসান সাফির, মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং সিমাব রহমান।
জরিপে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুধুমাত্র ৩০% উত্তরদাতার পরিবারের এমএফএফ অ্যাকাউন্ট মালিক ছিল নারী সদস্য। তাছাড়া, নারী মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট এর সংখ্যা অনেক কম। গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৫০% এমএফএফ অ্যাকাউন্ট মালিকেরা এজেন্টদের সাহায্য ছাড়া নিজেদের অ্যাকাউন্ট চালাতে সক্ষম নন – যা এজেন্টদের উপর অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের নির্ভরতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৫০% এমএফএফ অ্যাকাউন্ট মালিকেরা এজেন্টদের সাহায্য ছাড়া নিজেদের অ্যাকাউন্ট চালাতে অক্ষম।
এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী জানান, ক্যাশ আউটের সময় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করতে পারলে ব্যবহারকারীদের সেবা প্রদান করা আরও সহজ হবে।
সমীক্ষায় জানা যায়, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এজেন্ট এবং ইউডিসি ব্যবসায়ীদের ভূমিকা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা রয়েছে, যার কারণে ব্যবহারকারীরা সঠিক পক্ষের কাছে তাদের সরকারি প্রণোদনা সংক্রান্ত অভিযোগ করতে পারেন না। যদিও এমএফএস প্রদানকারীরা করোনা সময়কালে কোনও লিকুইডিটি সংকট ছাড়াই সেবা প্রদান করতে সক্ষম ছিল। কিন্তু অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার একটি স্পষ্ট অভাব দেখা যায়। কেননা এমএফএস এজেন্ট এবং ইউডিসি উদ্যোক্তাদেরকে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
বিকাশের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মিজানুর রশিদ বলেন, “অভিযোগের একটা বড় কারণ হচ্ছে অনেক ব্যবহারকারীই শুরুতে ভুল তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। সেই আইডিগুলোকে খুঁজে বের করা হয়েছে। তাদেরকে কখনোই বলা হয়নি যে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ক্যাশ ট্র্যান্সফার পাবেন না। যোগাযোগটা কখনোই পুরোপুরি হয়নি।”
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মারিয়া মে তাঁর আলোচনায় বলেন, কোভিড-১৯ এর সময়ে বাংলাদেশের অনেক পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে এই মোবাইল মানির সহযোগিতা করেছে, তা এই গবেষণায় থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে সহজেই মোবাইলে টাকা পাঠানোর জন্য এমএফএস প্রদানকারীরা অনেকধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা এই গবেষণায় উঠে এসেছে। স্বল্প প্রযুক্তির ব্যবহার করে এজেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেন তিনি।
সমাপ্তি বক্তব্যে বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, “কিছু ডিজিটাল উদ্ভাবন বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে দুর্বল জনগোষ্ঠীর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। অতএব দ্রুতগতির এই ডিজিটাইজেশনকে সামাজিক বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা দরকার।”
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উন্নয়ন সমুন্নয়ের এমেরিটাস ফেলো খন্দকার শাখাওয়াত আলি, সিজিএপির পলিসি লিড গ্রেগ চেন, বিআইজিডির আরপিজি বিভাগের প্রধান মেহনাজ রাব্বানিও আলোচনা করেন।