তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে অনলাইন প্লাটফর্মে ‘কোভিড-১৯ সময়কালীন এসএমই: প্রতিক্রিয়া, পুনরুদ্ধার ও সহনশীলতা’ শীর্ষক একটি নীতি নির্ধারণী সংলাপ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ মোশ্তাক হাসান।
এটুআই-এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) সেলিনা পারভেজ-এর সভাপতিত্বে এবং এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী এর সঞ্চালনায় অনলাইন অনুষ্ঠানে এটুআই-এর হেড অব ফিউচার অব ওয়ার্ক ল্যাব আসাদ-উজ্-জামান ‘কোভিড-১৯ সময়কালীন এসএমই সেক্টর: প্রতিক্রিয়া, পুনরুদ্ধার এবং স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন’ এর ধারণা বিষয়ক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন।
তিনি এ সময়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা কি ধরণের প্রতিকূল অবস্থার সম্মূখীন হয়েছেন, কর্মহীন হয়ে যাওয়া, দক্ষতা সংকট কাটিয়ে কিভাবে কর্মীরা নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নিজেদের উপযোগী করার চেষ্টা করছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
প্যানেল আলোচনায় যুক্ত ছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম, একশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এর সভাপতি শামস মাহমুদ, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) এর সভাপতি মির্জা নূরুল গণি শোভন, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর ইভিপি ও হেড অব এসএমই আনোয়ার ফারুক তালুকদার এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। কোভিড-১৯ সময়কালীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা ও সমাধান এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা তৈরিতে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন-এ বিষয়গুলো নিয়ে নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নেতৃত্ববৃন্দ আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে অংশীদারগণ, বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগ, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পুনরুদ্ধার করে এগিয়ে নিতে পারে, এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোশ্তাক হাসান বলেন, “এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়াটাই হবে করোনায় তাদের ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে এই খাতের উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থায়ন হলে এই খাত এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। একই সাথে ব্যংকগুলোরও উচিৎ এ সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি সহজ করে দেয়া।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ফাউন্ডেশান (এসএমইএফ) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই প্লাটফর্মে এনে অনলাইনে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত করার সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মতামত দেন। তিনি বলেন, “সামাজিক ক্যাম্পেইন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের স্থানীয় পণ্যের ব্যবসায়িক পরিধি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। একই সাথে প্রতিকূল অবস্থায় কিভাবে কাজ করা হবে এ বিষয়ে আরো নীতিমালা তৈরি করা দরকার”।
এসএমই এর ক্ষেত্রে নীতি ও পদ্ধতিসমূহকে পুনরায় সাজানো, বিনিয়োগ, তথ্য-প্রযুক্তি এবং সুযোগ সুবিধার উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মহামারির ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে উঠার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব ফারাহ কবির বলেন, “সরকারের উচিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের একটি ‘পুনরুদ্ধার ফান্ড’ গঠন করা, কেননা তারা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। একই সাথে উদ্যোক্তাদের উচিত ছোট ছাতার অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের পরিসরকে আরো বৃহৎভাবে সাজানো, ডিজিটাল সুযোগগুলো কাজে লাগানো এবং তাদের যোগ্যতাকে আরো উন্নত করা। অন্যদিকে তিনি নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান”।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি (নাসিব) এর প্রেসিডেন্ট জনাব নুরুল গনি শোভন, কিভাবে নতুন উদ্যোক্তারা প্রতিকূল পরিবেশেও ব্যাণিজ্যিক কার্যক্রম করতে পারে, এ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন স্কিম ও সুযোগ-সুবিধা প্রনয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা, যাতে করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয় এবং তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে”।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আবদুর রাজ্জাক মনে করেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের করোনা সংকটে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সরকারের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, “সরকারের প্রয়োজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করা একই সাথে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা যাতে করে উদ্যোক্তারা সংকট কাটিয়ে উঠতে সকল ধরনের সহযোগিতা পায় এ বিষয়ে মৌলিক পদক্ষেপ নেয়া”।
অনুষ্ঠানটিতে একটি দলগত আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা ৪ টি দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেক দল আলাদা আলাদা বিষয়ের উপর আলোচনা করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন। শিক্ষানবিশি, শিল্পোদ্যোগ, এসএমইস এবং এসএমই এর তথ্য-উপাত্তের বিষয়গুলো উঠে আসে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে একশন এইড বাংলাদেশ এর ম্যানেজার নাজমুল আহসান, এসএমই সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, একশন এইড বাংলাদেশ ও এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।